নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কা, ছক কষা হচ্ছিল কয়েক মাস ধরে

প্রতিদিন পাঠকের কাছে দেশের আলোচিত ঘটনা, রাজনৈতিক উত্তাপ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সমাজের পরিবর্তন এবং বিশ্বমঞ্চের নতুন বার্তা তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো। তথ্যপিপাসুদের তথ্যের চাহিদা মেটাতে সময় সংবাদও দেশের প্রধান প্রধান সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম পাঠকের সামনে নিয়মিত তুলে ধরছে। এখান থেকে এক নজরে জেনে নেয়া যাবে দেশের প্রধান সংবাদপত্রগুলোর প্রতিবেদন।দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় পত্রিকায় সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রকাশিত কিছু খবর নিচে তুলে ধরা হলো।  পত্রিকাগুলো দেশের আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ওসমান হাদির ওপর হামলা ও তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতিসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ছেপেছে। ১৪ মাসে গ্রেফতার ফ্যাসিস্টের ৫৬,১৮৭ দোসর / ৭০ ভাগই জামিনে মুক্ত - দৈনিক যুগান্তরের প্রধান খবর এটি।গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বহু নেতাকর্মী গ্রেফতার হন, জেলে যান। জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর নিষ্ঠুর হামলা, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগে বেশির ভাগ মামলা হয় গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। এছাড়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উসকানি, ষড়যন্ত্র, নাশকতাসহ অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিন্তু গ্রেফতার বেশির ভাগ আসামি এরই মধ্যে জামিনে বেরিয়ে গেছেন।   পুলিশ সদর দফতর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী হিসাবে সারা দেশ থেকে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৭০ ভাগ আসামি এরই মধ্যে জামিন পেয়ে গেছে। এই সংখ্যা জেলা পর্যায়ে প্রায় ৯০ ভাগ, যা আরও ভয়ংকর খবর। শেখ হাসিনার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে যেসব অপরাধী রাজনৈতিক লেবাসে দেশের মানুষের ওপর হত্যা-নিপীড়ন চালিয়েছে, তাদের এমন ঢালাও জামিনের ঘটনাকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয় হিসাবে দেখছেন জুলাই আন্দোলনে যুক্তরা। সরকারের তরফ থেকে অপরাধীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা প্রসিকিউশনের। তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। নির্বাচন সামনে রেখে শঙ্কা চোরাগোপ্তা হামলার - দৈনিক যুগান্তরের প্রথম পাতার খবর এটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, গুপ্তহত্যা, আগুন-সন্ত্রাসের মতো আরও ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, এ ধরনের তৎপরতা তত বাড়তে পারে। তারা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ির ঘটনাতেও সুযোগ নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। এর অন্যতম উদাহরণ ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা। ওই ঘটনায় কাদা ছোড়াছুড়ির কারণে ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি।   তবে এরই মধ্যে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির সন্দেহভাজন মূল শুটার ফয়সাল করিম মাহমুদের স্ত্রীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মূল হোতাও আটকের কাছাকাছি রয়েছে। ছক কষা হচ্ছিল কয়েক মাস ধরে - দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান খবর এটি। প্রতিবদেনটিতে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সংগঠিত নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত পাচ্ছে পুলিশ।   তদন্ত- সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনা করে হামলাটি চালানো হয় এবং উদ্দেশ্য ছিল দেশে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি করা; হামলার পরপরই পালানোর ছকও কার্যকর করা হয়। কে এই শুটার মাসুদ? - দৈনিক মানবজমিনের প্রধান খবর এটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদি। হামলাকারী দুজনের পরিচয় শনাক্ত করলেও তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। হাদির ওপর গুলিবর্ষণকারী ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুলকে গ্রেফতার করতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার। এরই মধ্যে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানের পাশাপাশি প্রত্যেকটি সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।   ভোটের আগে আতঙ্ক জনমনে - দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান খবর এটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা হলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীসহ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।   নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজনৈতিক নেতারাসহ জুলাই যোদ্ধারা। সরকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলেও এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সময়মতো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন হাল। নির্বাচনের ট্রেন চলা শুরু হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে সবাইকে। পরিস্থিতি ঠিক করতে এখনই দৃশ্যমান ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, হাদির ওপর গুলি চালানো এই ফয়সাল করিম মাসুদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কেশবপুর কলেজের পাশে। তার বাবার নাম হুমায়ুন কবির। বাউফলে বাড়ি হলেও প্রায় ৩৫ বছর আগেই তারা গ্রাম ছেড়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর আদাবর এলাকার বাসিন্দা হন। বর্তমানে আদাবর থানার পিস কালচার হাউজিং সোসাইটির ৯ নম্বর রোডের ৪১ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকে। সন্ত্রাস দমনে কড়া নজর - দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান খবর এটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি। খুন, মব সন্ত্রাস, চোরাগোপ্তা হামলা, আগুন, ভাঙচুর, চাঁদাবাজি লাগামহীন। অপরাধীরা বেপরোয়া। এক পক্ষ আরেক পক্ষের প্রতি অসহিষ্ণু, মারমুখী।   কেউ কাউকে মানছে না, ছাড় দিচ্ছে না। তিন দিন আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার মধ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির চিত্রটি আরো স্পষ্ট হয়েছে। এতে সব মহলেই আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বেড়েছে। এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির ওপর সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার ঘিরে আরও ভীতি ছড়াচ্ছে। ঝুঁকিতে থাকা প্রার্থী ও ব্যক্তিরা পাচ্ছেন গানম্যান-বডিগার্ড - দৈনিক সমকালের প্রধান খবর এটি। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে যারা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন, তাদের গানম্যান ও বডিগার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে তাদের গানম্যান দেয়া হবে। আর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ইউনিফর্মধারী বডিগার্ডের ব্যবস্থা করবে।   প্রার্থী ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তি ঝুঁকিতে আছেন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারাও একই ধরনের সুবিধা পাবেন। নির্বাচন পর্যন্ত তাদের জন্য এমন নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে।  উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত ভোটার এবার অর্ধকোটি - দৈনিক বাণিক বার্তার প্রধান খবর এটি। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট। সংবিধান অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করা প্রত্যেক নাগরিকই ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পান। এ হিসাবে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত প্রায় ৫২ লাখ শিক্ষার্থীর প্রায় সবাই এবার ভোটার হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।   এ শিক্ষার্থীদের বড় অংশই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র ও রাজনীতির বিভিন্ন সংস্কারের দাবিতেও তারা ছিলেন সোচ্চার। রাজনৈতিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণের সে ধারাবাহিকতায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়েও এ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে।