বরিশালে বাড়ছে ‘হানিট্র্যাপ’ চক্রের প্রতারণা, সর্বস্ব হারাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেন এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্য। অনলাইনের লেয়ারে লেয়ারে বিছানো রয়েছে অপরাধের ভয়ংকর জাল। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে, কতিপয় পুলিশ, নামধারী সাংবাদিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উঠতি নেতাদের নাম। এদের প্রতারণার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে নগদ অর্থ ও মালামাল লুটের ঘটনা।চলতি বছরের গত ২১ অক্টোবর ‘হানিট্র্যাপ’ চক্রের শিকার হয়ে বরিশাল শহরের সাগরদী এলাকার জনৈক যুবক খুইয়েছেন নগদ অর্থ ও মালামাল। পরবর্তীতে বাদী হয়ে তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। সেই মামলার বিবরণে উঠে আসে এই গ্রুপের ভয়ানক প্রতারণার চিত্র। পুলিশ এই মামলার ১২ আসামির মধ্যে দুই তরুণ-তরুণী পাখি আক্তার নিশি এবং ভুয়া সাংবাদিক রিমনকে গ্রেফতার করেছে।ভুক্তভোগী ওই যুবক জানান, তার সঙ্গে পাখি আক্তার নিশির ফেসবুকের একটি গ্রুপে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে মোবাইল নম্বর বিনিময়ের একপর্যায়ে তরুণী তাকে শহরের একটি নিরাপদ স্থানে একা দেখা করার প্রস্তাব দেন। সেখান থেকেই নগরীর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় ঈদগাহ লেনের একটি বাসায় নিয়ে যান নিশি। সেখানে নিয়ে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তাকে জিম্মি করে ফেলে তরুণীর পুরুষ সঙ্গীরা।তিনি আরও জানান, ‘তাদের মধ্যকার দুজন রিশাদ এবং সাজিদ নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে। এতে ওই যুবক কিছুটা ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লে তার কাছ থেকে নগদ ৫৩ হাজার টাকাসহ মোবাইল ও একটি স্বর্ণের চেইন নিয়ে যাওয়া হয়।অন্যদিকে গত ২ ডিসেম্বর শহরের ভাটার খাল এলাকার জেলা পরিষদের মার্কেটের ৩য় তলার একটি কক্ষে মধ্যরাতে খুন হন মোটরসাইকেল চালক বেলাল হোসেন। মামলা দায়েরের পর দুই নারীসহ মোট তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।আরও পড়ুন: আইনজীবীর নেতৃত্বে হানিট্র্যাপ চক্র, প্রেমের ফাঁদে জিম্মি করে টাকা আদায়!যদিও পরিবারের দাবি নেশা ও অনৈতিক কাজে সহায়তা না করায় বেলালকে খুন হতে হয়েছে।ভুক্তভোগীর স্ত্রী শাহনাজ জানান, তার স্বামী বেলাল ঘটনার দিন বাসা থেকে বের হোন। এরপর মধ্যরাতে একটি নম্বর থেকে ফোন দিয়ে জানানো হয় বেলাল সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।তিনি বলেন, ‘বেলালকে নেশা ও অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু তিনি তাতে সম্মতি না দেয়ায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে তাকে খুন করা হয়।’পরিসংখ্যান বলছে গত এক বছরে হানিট্র্যাপের শিকার হয়ে অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি খুইয়েছেন সর্বস্ব। তবে সম্মানহানির ভয়ে মুখ না খোলায় পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা।সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশালের সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের কর্মহীনতা বাড়ার পাশাপাশি সচেতনতা কমে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত ঘটছে এমন অপরাধ।’পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এসব ঘটনায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে, মামলাও হচ্ছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা রোধে সর্তক অবস্থানে রয়েছেন তারা।