চুপচাপ বসে আছেন, কাজ তেমন নেই, তবু মাথার ভেতর যেন চাপ লাগছে। কী হয়েছিল, কী হতে পারে, আর কী হলে ভালো হতো- এই তিনের মাঝখানেই আটকে যাচ্ছে ভাবনা। পরিচিত লাগছে তো? এটাকেই বলে বেশি ভাবা বা ওভারথিংকিং। এখনকার দিনে এই সমস্যায় ভোগেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।কিন্তু সত্যি বলতে, বেশি ভাবা কোনো খারাপ অভ্যাস হিসেবে শুরু হয় না। এর শুরুটা হয় দায়িত্ববোধ থেকে, সাবধান থাকার ইচ্ছা থেকে। সমস্যা হয় তখনই, যখন এই ভাবনাগুলো আর কাজে লাগে না, বরং মনের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। কেন মাথায় বারবার একই ভাবনা ঘোরে?আমাদের মস্তিষ্ক সব সময় স্পষ্ট উত্তর চায়। কোনো বিষয় অসম্পূর্ণ থেকে গেলে, মাথা সেটা ছাড়তে চায় না। কী হবে, কী হতে পারত- এই প্রশ্নগুলো বারবার ফিরে আসে। ঠান্ডা মাথায় ভাবার জায়গায় তখন উদ্বেগ ঢুকে পড়ে।এই অবস্থায় শরীরের চাপও বাড়ে। ভেতরের সতর্ক সংকেতগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে ছোট সমস্যাও বড় বলে মনে হয়। ভাবতে ভাবতে আমরা ভুলে যাই, সব সমস্যার সমাধান শুধু ভাবনায় আসে না।বেশি ভাবলে মনটা সংকুচিত হয়ে যায়। চারদিক থেকে ভাবার সুযোগ কমে যায়। মাথা একটা পথেই হাঁটতে থাকে। এতে মনোযোগ কমে, সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়। সবচেয়ে খারাপ হলো- মনের ভেতরের বানানো ভয়কেও মস্তিষ্ক সত্যি ধরে নেয়। তখন নিজের ওপর বিশ্বাস কমতে থাকে। ছোট ছোট সিদ্ধান্তও কঠিন লাগে। ভারতীয় গণমাধ্যম “টাইমস অফ ইন্ডিয়া” অনুসারে চলুন জেনে নিই ওভারথিংকিং বা বেশি ভাবনা থেকে উত্তরণের কিছু সহজ উপায় – ভাবনার আগে শরীর যে সংকেত দেয়, সেদিকে খেয়াল করতে হবেমজার বিষয় হলো, ওভারথিংকিং অনেক সময় মাথায় নয়, শরীরে আগে ধরা পড়ে। কাঁধ শক্ত হয়ে যাওয়া, শ্বাস ছোট হয়ে আসা, অজান্তেই দাঁত চেপে ধরা— এসবই প্রাথমিক লক্ষণ।এই সময় এক মিনিট ধীরে শ্বাস নিলেই অনেকটা কাজ হয়ে যায়। শরীর শান্ত হলে, মনও একটু শান্ত হয়। অনেক সময় ভাবনা থামাতে হলে আগে শরীরকে থামাতে হয়। আরও পড়ুন: টেনশন থেকে মুক্তির কার্যকরী ৫ উপায় ভাবনা বন্ধ নয়, বরং সময় বেঁধে দিতে হবেনিজেকে জোর করে ভাবতে মানা করলে কাজ হয় না। বরং উল্টোটা হয়। তার চেয়ে ভালো হলো ভাবনার জন্য আলাদা সময় রাখা। ধরুন, দিনে ১৫ মিনিট আপনি ইচ্ছেমতো ভাববেন, সব চিন্তা মাথা থেকে বের করবেন।এই সময়ের বাইরে মাথায় চিন্তা এলে নিজেকে বলুন- “এইটা পরে ভাবব।” এতে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে শিখে নেয়, সব সময় ভাবতে হবে না। গবেষণায় দেখা গেছে, এভাবে ভাবনার সময় বেঁধে দিলে অকারণ চিন্তা কমে। পরিস্থিতি নয়, প্রশ্ন বদলাতে হবেওভারথিংকিং চলে “যদি এমন হয়” ধরনের প্রশ্নে। এগুলোর শেষ নেই। তাই প্রশ্নটা একটু বদলান। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন- “এই মুহূর্তে আমি কী করতে পারি?”এই প্রশ্ন মাথাকে কাজে ফেরায়। ছোট কাজ যেমন - একটা লাইন লেখা, কাউকে মেসেজ পাঠানো, তালিকার একটা কাজ শেষ করা – এগুলোই যথেষ্ট। কাজ শুরু হলেই ভাবনার চাকা থামে। ঘুমের আগে মাথা হালকা করার কৌশলরাতে চারপাশ শান্ত থাকলে ভাবনা বাড়ে, কারণ তখন মন ফাঁকা থাকে। এজন্য ঘুমোতে যাওয়ার আগে পরদিনের তিনটা জরুরি কাজ লিখে রাখা ভালো। এতে মাথা নিশ্চিন্ত হয়। মনে হয়, সব গুছিয়ে রাখা আছে। ফলে ঘুম সহজে আসে ও গভীর হয়। আরও পড়ুন: অতিরিক্ত চিন্তা থেকে মুক্তির সহজ উপায় ওভারথিংকিং মানেই দুর্বলতা নয়সবচেয়ে জরুরি কথা হলো- বেশি ভাবা কোনো দোষ নয়। এটা মনে সংকেত দেয়- হয়তো একটু বিশ্রাম দরকার, হয়তো পরিষ্কার কথা দরকার, হয়তো নিজের পাশে নিজের দাঁড়ানো দরকার।এজন্য নিজেকে দোষ না দিয়ে, বিষয়টাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। নিজের সঙ্গে একটু নরম ব্যবহার করলে মানসিক চাপ কমে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিজের প্রতি সদয় হলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। শেষ কথা একটাই- অতিরিক্ত ভাবনা মুছে ফেলা নয় বরং লক্ষ্য হলো, ভাবনার সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক তৈরি করা। তাহলেই মন হালকা থাকবে, জীবন আরেকটু সহজ হবে।