মুন্সীগঞ্জে অবৈধ দোকানপাটের দখলে ফুটপাত ও সড়ক

মুন্সীগঞ্জ শহরের হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকা থেকে দেওভোগের জেলা পরিষদ কার্যালয় পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় ফুটপাত ও সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী অবৈধ দোকানপাট। এতে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, নারী ও বয়স্ক মানুষসহ সাধারণ পথচারীদের সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে, যা প্রায়ই ছোটোখাটো দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরাতন সদর থানা সড়কের পুরো ফুটপাতই হকারদের দখলে। স্থায়ী দোকান মালিকরাও তাদের পণ্য সামগ্রী ফুটপাত পর্যন্ত ছড়িয়ে রেখেছেন, ফলে হাঁটার জন্য এক ফুট জায়গাও খুঁজে পাওয়া যায় না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে অবাধে বেচাকেনা চলায় যান চলাচলে তীব্র জট তৈরি হয়। শহরের সুপার মার্কেট মোড়, শিল্পকলা চত্বর, কোর্টকাচারি চত্বর, লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একই চিত্র। মূলত শহরের প্রধান দুটি সড়ক-সদর থানা (পুরাতন) সড়ক ও জুবলী রোড; উভয় পাশে ফুটপাত দখল করা হয়েছে। এক কিলোমিটারের বেশি এলাকায় সবজি ও ফলের দোকান, স্ট্রিট ফুডের ভ্যান, অটোরিকশা স্ট্যান্ডসহ সব মিলিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো এখন কার্যত হাটবাজারে পরিণত হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ পথচারীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ দোকান উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা স্থায়ী হয় না। পুলিশ প্রশাসন মাঝেমধ্যে ভাসমান হকার উচ্ছেদ করলেও কয়েকদিনের মধ্যেই দখলদাররা আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। পথচারী সুমী আক্তার বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে হাঁটার কথা থাকলেও এখানে হাঁটার কোনো সুযোগ নেই। শিশু নিয়ে বাইরে বের হলে ভয় লাগে-কখন যে গাড়ির ধাক্কা লাগে, বলা যায় না। দিনের পর দিন এই কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।’ আরও পড়ুন: গুলিস্তানে সড়ক-ফুটপাত দখল করে দোকান, ভয়াবহ দুর্ভোগ হানিফ ফ্লাইওভারে! স্থানীয় বাসিন্দা আজগর আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি এখন আর শহর নেই, পুরো এলাকাই যেন হাটবাজারে পরিণত হয়েছে। কারা দোকান বসায়, কারা টাকা নেয়-সবাই জানে। কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান নেই।’   নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘পোস্ট অফিস থেকে কাচারি চত্বর পর্যন্ত শতাধিক দোকান বসে। প্রতি মাসে বাজার কমিটির লোকজন এসে টাকা নেয়। তাই বাধ্য হয়েই সবাইকে দিতে হয়।’ স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে হলে মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেই হবে না। প্রয়োজন নিয়মিত তদারকি ও কঠোর ব্যবস্থা। পাশাপাশি যাদের মদদে এসব অবৈধ দখল চলছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে শহরের এই নৈরাজ্য বন্ধ হবে না। অন্যথায় মুন্সীগঞ্জ শহরের সাধারণ মানুষকে প্রতিদিনই এই দুর্ভোগ বয়ে বেড়াতে হবে। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ফুটপাত দখলসহ এ ধরনের বিষয় নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা এবং জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। পৌরসভার কনজারভেন্সি টিমের মাধ্যমে যে পরিমাণ আইন প্রয়োগের এখতিয়ার রয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু বিষয়টির সঙ্গে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও জনসমাগম ব্যবস্থাপনা জড়িত, তাই পুলিশ বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। জেলা প্রশাসক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হচ্ছে এবং অচিরেই এর বাস্তব কার্যক্রম শুরু হবে, যা খুব শিগগিরই দৃশ্যমান হবে।