রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কাঁচা বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের দামে চাপ স্পষ্ট। সবজি, মাছ ও মুরগির দামে সামান্য ওঠানামা থাকলেও সাধারণ ক্রেতাদের জন্য স্বস্তির কোনো বার্তা নেই। বাজারে গেলেই হিসাবের খাতা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, শিম, টমেটো, মুলা, গাজর কোনো কিছুর কমতি নেই। কিন্তু সবগুলো পণ্যের দাম চড়া। সবজির দাম বেশি থাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর চাপ বাড়ছে। মাছের বাজারেও একই চিত্র। নদী ও খামারের মাছের সরবরাহ থাকলেও দাম বেশ চড়া। চাল, ডাল, তেলের দামও স্বস্তি দিচ্ছে না ক্রেতাদের। তবে বাজারে আসা নতুন আলু, ডিম ও মুরগির দাম কিছুটা কম দেখা গেছে। সবমিলিয়ে কাঁচাবাজারে এখনো স্বস্তির দেখা নেই। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বাজারে কার্যকর নজরদারি ও বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দামে স্থিতিশীলতা ফিরবে। ভোক্তারা বলছেন, আয় বাড়ছে না, অথচ নিত্যপণ্যের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। এতে সংসার চালানো ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। বাজারে কার্যকরি কোনো তদারকি নেই, যে কারণে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম রাখছেন। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আড়ত থেকে বাড়তি দামে কেনার কারণে তারা বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। দাম বেশি হওয়ায় কারণে বিক্রিও কম হচ্ছে। শীতের সবজি টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। গাজর, শিম, বরবটির কেজিও কোনো কোনো ব্যবসায়ী এক\'শ টাকা বিক্রি করছেন। বাজার ও মানভেদে গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বরবটি। মানভেদে শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা। শালগমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ফুলকপি, বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৬০ টাকা। মুলার কেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকা। বাজার থেকে এক আটি পালংশাক কিনতে ক্রেতাদের ২০ টাকা গুনতে হচ্ছে। লাল শাক, মুলা শাক বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা আটি। এক হালি কাঁচা কলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। লাউ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাঝারি সাইজের রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। মৃগেল মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। এছাড়া কই মাছ ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, ষোল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী গরুর মাংস ৭৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। দরদাম করলে কোনো কোনো ব্যবসায়ী কিছুটা কম রাখছেন। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি। তবে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি। এদিকে মুদি দোকানে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। মোটা চালের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। ছোট দানার মসুর ডাল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা এবং মুগডাল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেল ১৯৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন খিলগাঁওয়ে বাজার করতে আসা গৃহিণী রেহানা বেগম। তিনি বলেন, বাজারে সবজি , চাল, ডাল, তেল সবকিছুর দাম চড়া। মাসের বাজার করতে গেলে এখন হিসাব মেলানোই সবচেয়ে কঠিন হয়ে গেছে। আগে যে টাকায় এক সপ্তাহের বাজার হতো, এখন সে টাকায় তিন-চার দিনের বেশি চলে না। তিনি বলেন, এখন শীতের সবজির ভরা মৌসুম। তারপরও টমেটোর কেজি ১০০ টাকার ওপরে। শিম, গাজরের কেজিও ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চালের কেজি ৮০ টাকা, ডালের কেজি প্রায় ২০০ টাকা। জিনিসপত্রের দাম এমন বাড়তি হলে মানুষ স্বস্তিতে থাকে কীভাবে? রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সাইফুল ইসলাম বলেন, চাল, ডালের দাম কমছে না। ভোজ্যতেলের দামও বহুদিন ধরে চড়া। কাঁচাবাজারে ৫০০ টাকা নিয়ে গেলে খুব বেশি বাজার করা যায় না। বেতন বাড়েনি, কিন্তু বাজার খরচ নিয়মিতই বাড়ছে, এটাই আমাদের মতো নির্ধারিত বেতনের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। কারওরান বাজারে কথা হয় মো. সুলাইমান হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সবজি, ডাল, চাল, তেলের দাম একসঙ্গে বেশি থাকলে সাধারণ মানুষের কোনো বিকল্প থাকে না। মাছ বা মাংস না খেলেও চাল, ডাল, তেল তো লাগেই। বাজারে এলেই মনে হয়, সবকিছুই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কারওরান বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল মালেক বলেন, অনেকে মনে করেন আমরা ইচ্ছা করে দাম বাড়াচ্ছি, কিন্তু মোকামে যেভাবে সবজির দাম বাড়ছে, তাতে খুচরা বাজারে কম দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। পরিবহন আর শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম আগের মতো রাখা যাচ্ছে না। চাল ও ডালের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, চালের দাম দীর্ঘদিন ধরেই উঁচু পর্যায়ে আছে। মিল থেকে যে দামে চাল আসছে, তার সঙ্গে ভাড়া আর দোকান খরচ যোগ হলে খুচরা দামে প্রভাব পড়বেই। ডালের ক্ষেত্রেও আমদানি ও সরবরাহ ব্যয়ের কারণে দাম কমছে না। আড়ত থেকে বেশি দাম দিয়েই চাল, ডাল কিনতে হচ্ছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। ভোজ্যতেলের দামের বিষয়ে হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল হোসেন বলেন, ভোজ্যতেলের দাম এখন অনেকটাই কোম্পানি নির্ধারিত। ডিলার পর্যায়েই দাম বেশি থাকায় আমাদের হাত বাঁধা। আমরা বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। কম দামে কিনতে পারলে কম দামে বিক্রি করতে পারি। জিনিসপত্রের দাম কম থাকলে আমাদের বিক্রি ভালো হয়। দাম বেশি হওয়ায় কারণে এখন আমাদের বিক্রিও কম। এমএএস/ইএ/জেআইএম