স্বাধীনতা মহান আল্লাহর সেরা দান। পরাধীনতার খাঁচা ভেঙে মুক্ত আকাশে ডানা মেলার যে সংগ্রাম, তার নামই বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১-এর সেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে যেমন লড়েছেন সাধারণ মানুষ, তেমনি ঈমান, আদর্শ ও দেশপ্রেমকে শক্তি করে অগ্রভাগে ছিলেন আলেম সমাজ।মসজিদের মিম্বর, মাদ্রাসার পাঠশালা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র-- সবখানেই ছিল তাঁদের দৃপ্ত উপস্থিতি। কেউ সরাসরি রণাঙ্গনে, কেউ নেতৃত্বে, কেউ আবার শব্দসৈনিক হয়ে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন মুক্তির পথে। আত্মত্যাগ, শাহাদত ও সাহসিকতার সেই ইতিহাস আজও স্মরণ করিয়ে দেয়-- স্বাধীনতা অর্জনে আলেম সমাজের ভূমিকা ছিল গভীর, দৃঢ় ও অবিস্মরণীয়। ‘জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ’ দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় বুজুর্গ হাফেজ্জি হুজুর (রহ.) মুক্তিযুদ্ধকে আখ্যায়িত করেছিলেন-- “এটা হচ্ছে জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ। পাকিস্তানিরা জালিম আর আমরা বাংলাদেশিরা মজলুম।” এই বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজের নৈতিক অবস্থানকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে আলেম সমাজের ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আগা শাহির এক সাক্ষাৎকার মার্কিন টেলিভিশন এবিসিতে প্রচারিত হয়। সেখানে সাংবাদিক বব ক্লার্কের প্রশ্নোত্তরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে—বাংলাদেশের আলেম সমাজ মুক্তিযুদ্ধে জনগণের পাশে ছিলেন এবং সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। রেফারেন্স: এম. আর. আখতার মুকুল, আমি বিজয় দেখেছি (পৃষ্ঠা ১৬৭) নেতৃত্বে ছিলেন আলেমরাই মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অগ্রসৈনিক। তিনি টানা ২৪৩ দিন আত্মগোপনে থেকে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় অসংখ্য সাধারণ মানুষ ট্রেনিং ক্যাম্পে যোগ দেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁর অমূল্য ধর্মীয় গ্রন্থ ও বাড়িঘর পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। রণাঙ্গনে মাদ্রাসার শিক্ষক ঢাকার আরজাবাদ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোস্তফা আজাদ মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মেজর। তিনি ছাত্র ও যুবকদের সংগঠিত করে গ্রামের মাঠে সামরিক প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর যুদ্ধক্ষেত্র ছিল মেজর (অব.) জলিলের নেতৃত্বাধীন ৯ নম্বর সেক্টর। আলেমদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ পটিয়া মাদ্রাসার প্রবীণ ওস্তাদ আল্লামা দানেশ (রহ.) পাকিস্তানি সেনাদের গোলাবর্ষণে শাহাদতবরণ করেন। এছাড়া আরও যেসব আলেমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন-- মাওলানা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ (মালিবাগ জামিয়া শরইয়্যাহ), মাওলানা আবদুর রহমান, মাওলানা মুস্তাফিজ (হাতিয়া), মাওলানা ইমদাদুল হক আড়াইহাজারীসহ বহু আলেম-উলামা। এছাড়া ২৬ মার্চ ভোরে ঢাকার হাতিরপুল মসজিদের ইমাম হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। আরও পড়ুন: ঈসা (আ.) যে শহরে দাজ্জালকে হত্যা করবেনআলেমদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে কোরআন তেলাওয়াত পাঠ ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকার গঠিত হলে মাওলানা উবায়দুল্লাহ বিন সাইদ জালালাবাদী ও মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাইদ জালালাবাদী খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় পেরিয়ে ভারতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর নির্দেশনায় তাঁরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে কোরআন তেলাওয়াত ও তাফসির পরিচালনা করে ‘শব্দসৈনিক’-এর ভূমিকা পালন করেন।