ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্যখাত নতুন করে বড়ো ধরনের অচলাবস্থার মুখে পড়েছে। আবাসিক চিকিৎসকেরা সরকারের সর্বশেষ সমঝোতা প্রস্তাব নাকচ করায় এই সপ্তাহে পাঁচ দিনের কর্মবিরতি শুরু হতে যাচ্ছে। এমন এক সময়ে এই সিদ্ধান্ত এলো, যখন দেশজুড়ে তীব্র ফ্লু সংক্রমণে হাসপাতালগুলো এরই মধ্যে অতিরিক্ত চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এনএইচএস সূত্র জানায়, ধর্মঘটের প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে চিকিৎসাসেবা বাতিল এবং পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বহির্বিভাগের রোগী থেকে শুরু করে অস্ত্রোপচার ও ক্যানসার চিকিৎসার মতো জরুরি সেবাও এতে প্রভাবিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের ধারণা, মোট প্রায় ৪০ হাজার চিকিৎসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নতুন করে নির্ধারণ করতে হতে পারে। রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ পরিচালিত মতামত জরিপে বড়ো ব্যবধানে সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়। সংগঠনটির মতে, প্রস্তাবটি চিকিৎসকদের দীর্ঘদিনের বেতন বৈষম্য ও প্রশিক্ষণ সংকটের সমাধান দিতে ব্যর্থ। ফলে বুধবার সকাল থেকে নির্ধারিত কর্মবিরতি বাতিলের কোনো সুযোগ থাকছে না। এই পরিস্থিতিতে রোগী অধিকার সংগঠনগুলো সরকার ও চিকিৎসক নেতাদের আলোচনায় বসার পাশাপাশি স্বাধীন মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা এই বিরোধের সরাসরি ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা, যারা সময়মতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবারের কর্মবিরতি আগের তুলনায় বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। শীতের শুরুতেই ফ্লু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা রেকর্ড ছুঁয়েছে। ফলে জরুরি বিভাগে ভিড় বেড়েছে এবং শয্যা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে হওয়ায় হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব ওয়েস স্ট্রিটিং ধর্মঘটের সমালোচনা করে বলেছেন, এই পদক্ষেপ রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তার মতে, সরকার এরই মধ্যে বেতন বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ সুযোগ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু চিকিৎসকদের দাবির সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, চিকিৎসক নেতারা সরকারের অবস্থানকে বাস্তবতা-বিবর্জিত বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের দাবি, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ আসন না থাকায় হাজার হাজার যোগ্য চিকিৎসক কর্মহীন থাকছেন বা পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। পাশাপাশি প্রস্তাবিত বেতন বৃদ্ধিকে তারা মূল্যস্ফীতির তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করছেন। এদিকে এনএইচএসের শীর্ষ কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, শীতকালীন চাপ ও বড়দিনের কাছাকাছি সময়ে এই কর্মবিরতি স্বাস্থ্যসেবাকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। ফ্লু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় সামনে দিনগুলোতে হাসপাতাল পরিচালনা বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অবিলম্বে কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো না গেলে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যার সবচেয়ে বড়ো মূল্য দিতে হবে রোগীদেরই। এমআরএম/এএসএম