ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা ঠুকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ফ্লোরিডার একটি আদালতে এই মামলা দায়ের করা হয়। খবর রয়টার্সের।মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি ভাষণের সম্পাদিত ভিডিও ক্লিপ বিবিসি এমনভাবে প্রচার করেছে, যেখানে মনে হয়েছে, তিনি তার সমর্থকদের সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে হামলা চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প তাকে নিয়ে অনেক সংবাদ প্রচারকে ‘অসত্য বা অন্যায্য’ বলে মনে করেন এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা তার সেই লড়াইকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেল। ট্রাম্পের অভিযোগ, ব্রিটিশ সরকারের মালিকানাধীন সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির তার ভাষণের বিভিন্ন অংশ জোড়া দিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে, যাতে তার মানহানি হয়েছে। সম্পাদিত ওই ভাষণের একটি অংশে ট্রাম্পকে সমর্থকদের ক্যাপিটলের দিকে মিছিল করে যেতে বলতে দেখা যায় এবং অন্য অংশে তিনি বলছেন, ‘সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করুন।’ আরও পড়ুন: মার্কিন পরিচালক রেইনার ও স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ছেলে আটক কিন্তু ট্রাম্প ভাষণে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বানও জানিয়েছিলেন। বিবিসি তার ভাষণ সম্পাদনা করে এই অংশটুকু বাদ দিয়েছিল বলে অভিযোগ। ট্রাম্পের মামলায় দুটি অভিযোগ করা হয়েছে। প্রথমত, বিবিসি তার মানহানি করেছে এবং ফ্লোরিডার একটি আইন লঙ্ঘন করেছে। ওই আইনে প্রতারণামূলক ও অন্যায্য বাণিজ্যিক আচরণ নিষিদ্ধ। মামলায় দুটি অভিযোগের প্রতিটির জন্য ট্রাম্প ৫ বিলিয়ন ডলার করে মোট ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক এক মাস আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর ‘ট্রাম্প: আ সেকেন্ড চান্স?’ শিরোনামের এই তথ্যচিত্রটি প্রকাশ করে বিবিসি। তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর এর প্রতিবাদ জানায় এবং বিবিসিকে ‘শতভাগ ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ আখ্যা দেয় হোয়াইট হাউস। এরপর চলতি বছরের ১০ নভেম্বর সংবাদমাধ্যমটিকে এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয় ট্রাম্পের আইনি দল। চিঠিতে বিবিসিকে তথ্যচিত্রটি ‘পূর্ণ ও ন্যায্যভাবে’ প্রত্যাহার করার জন্য ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। অন্যথায় মানহানির মামলার মুখোমুখি হতে হবে বলে জানানো হয়। বিবিসি এ ঘটনার জন্য ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চায় এবং নিজেদের সিদ্ধান্তগত ভুল স্বীকার করে নেয়। বিবিসি এ–ও বলে, তাদের ওই ভুল সম্পাদনার কারণে এমন ধারণা তৈরি হয়েছিল যে ট্রাম্প সরাসরি সহিংস কর্মকাণ্ডের আহ্বান জানিয়েছেন। আরও পড়ুন: সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২ মার্কিন সেনা নিহত, প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের তবে এ ঘটনায় মামলার কোনো আইনি ভিত্তি নেই বলেও মন্তব্য করে বিবিসি। এর প্রায় এক মাস পর ফ্লোরিডার মায়ামির ফেডারেল আদালতে মামলা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘বিবিসি ক্ষমা চাইলেও নিজের অন্যায়ের জন্য কোনো প্রকৃত অনুশোচনা দেখায়নি এবং ভবিষ্যতে সাংবাদিকতাগত কেলেঙ্কারি প্রতিরোধে কোনো তাৎপর্যপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনও আনেনি।’ বিবিসি টেলিভিশন দর্শকের ওপর ধার্যকৃত বাধ্যতামূলক ‘লাইসেন্স ফি’ থেকে পাওয়া অর্থে পরিচালিত হয়। তাই ট্রাম্পকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া রাজনৈতিকভাবে জটিল বা সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে বলে মত ব্রিটিশ আইনজীবীদের। ট্রাম্পের আইনজীবী দলের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে বিবিসির নিজের দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যা সম্পূর্ণভাবে তাদের নিজস্ব বামপন্থি রাজনৈতিক এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে করা হয়েছে। বিবিসির একজন মুখপাত্র সোমবার সকালে রয়টার্সকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আর কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। আমাদের অবস্থান একই রয়েছে।’ ট্রাম্পের মামলা করার খবর প্রচারের পর বিবিসি এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।