মহান বিজয় দিবসে লাল-সবুজের আনন্দ ছুঁয়ে গেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। বিজয়ের দিনে সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে মিশেছে লাখো মানুষের উচ্ছ্বাস। এসব মানুষের ভিড়ে ব্যস্ততা বেড়েছে ৫ শতাধিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট, রেস্তোরা থেকে শুরু করে বার্মিজ পণ্যের দোকান ও সৈকতপাড়ের ব্যবসায়ীদের। আর পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সবখানে জোরদার করা হয়েছে নজরদারি।‘কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত মানেই অন্যরকম ভালো লাগা। যতবার আসি ততবারই আসতে মন চায়। বাচ্চাদের স্কুলও বন্ধ। তাই মহান বিজয় দিবসের ছুটিতে কংক্রিটের শহর ছেড়ে সমুদ্রে গা ভেজানোর আনন্দ।’ বলছিলেন, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা সাগরতীরে বেড়াতে আসা ভ্রমণপিপাসু রুবায়া রহমান। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে সৈকতের লাবনী পয়েন্টের বালিয়াড়িতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে মেতেছিলেন গাজীপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী আব্দু সাত্তার। তার সঙ্গে এসেছেন পরিবারের ৭ সদস্য। আব্দু সাত্তার বলেন, ‘নভেম্বর মাস থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে আসব ঠিক করেছিলাম। কিন্তু নানা কারণে বারবার তারিখ পরিবর্তন করেও আসা হয়নি। এখন বিজয় দিবসের ছুটি পেয়েছি বলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে এসেছি। খুবই ভালো লাগছে, প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দে যাচ্ছে।’আরও পড়ুন: শুটকি পল্লী থেকে পর্যটন কেন্দ্র, বিচ্ছিন্ন কুতুবদিয়া এখন ভ্রমণ পিপাসুদের গন্তব্যবিশাল সাগর শুধু ঢেউ নয়, এই ঢেউয়ের মাঝে আজ মিশে আছে বিজয়ের গল্প, বিজয়ের গর্ব। মহান বিজয় দিবসে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত যেন পরিণত হয়েছে উৎসবের এক বিশাল প্রান্তরে। লাল-সবুজের রঙে রাঙা মানুষ, হাতে পতাকা-বিজয়কে ছুঁয়ে দেখার এক অন্য রকম অনুভূতি। পরিবারের হাসি, শিশুদের আনন্দ আর ক্যামেরার ক্লিকে বন্দি হচ্ছে বিজয়ের মুহূর্তগুলো। পর্যটক নুরুল আলম বলেন, ‘সমুদ্রের নোনাজলে বেশ ভালো লাগছে। গোসল করে বালিয়াড়িতে উঠে আসি, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার নেমে পড়ি। এভাবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গোসল করেছি। জল থেকে উঠতেই মন চায় না। মনে হয় গোসল করে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাচ্ছে।’ ঢাকা থেকে আসা পর্যটক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘বিজয় দিবসটা সমুদ্রের পাশে কাটাতে পারাটা সত্যিই বিশেষ। বিশাল সাগরের সামনে দাঁড়িয়ে স্বাধীন দেশে এভাবে উৎসব করা-এটাই তো বিজয়ের আসল মানে। খুবই ভালো লাগছে।’ এদিকে পর্যটকের ভিড়ে চাঙ্গা ৫ শতাধিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট ও রেস্তোরা ব্যবসা। ব্যস্ততার শেষ নেই সৈকতপাড়ের শামুক-ঝিনুক, জেড স্কী, বিচ বাইক, ফটোগ্রাফার, ঘোড়াওয়ালাসহ বার্মিজ পণ্যের দোকানীদের। সবার মাঝে বিরাজ করছে উৎসব। জেড স্কী ব্যবসায়ী সাদ্দাম বলেন, ‘বিজয় সত্যিই আনন্দের। মহান বিজয় দিবসের লাখো পর্যটক এখন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। তাই বিজয়ের এদিনে আমাদের ভালো ব্যবসা হচ্ছে।’ বার্মিজ পণ্যের দোকানদার মোহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, ‘মহান বিজয় দিবস থেকে শুরু করে বাকি পুরো মাসটা আশা করি প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটবে। এতে আমাদের ব্যবসায় লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখব।’ হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসের মহা-ব্যবস্থাপক মো: ইয়াকুব আলী বলেন, ‘হতাশা কাটিয়ে মুখে হাসি ফুটেছে। তাও মহান বিজয় দিবসের দিনে। বিপুল সংখ্যক পর্যটক এখন কক্সবাজার। আশা করি- থার্টি ফাস্ট নাইট পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকের সমাগম ঘটবে এবং চাঙ্গা থাকবে পর্যটন ব্যবসা।’আরও পড়ুন: শীতের আমেজে রঙিন কক্সবাজার সৈকতআর সমন্বয় করে পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে দাবি লাইফ গার্ড সংস্থার। সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র কর্মী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটকরা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের আসলেই নেমে পড়েন নোনাজলে। তাই পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তায় আমরা সর্বদা নিয়োজিত রয়েছে। আর বালিয়াড়ি থেকে শুরু করে হোটেল মোটেল জোন ও পর্যটন স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে তারা নিরাপত্তা জোরদার করেছে। আর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে, যেখানে পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পাচ্ছে, সেখানে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে।’এদিকে বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসায় ট্যুরিস্ট পুলিশকে তৎপর দেখা গেছে। পুলিশ সদস্যদের সৈকতের ৩টি পয়েন্টে হাঁটাহাঁটি করার পাশাপাশি পর্যটকের সমস্যার কথা শুনতে দেখা গেছে।সৈকতের আকাশে মনোমুগ্ধকর ফ্লাই পাস্টমহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিমান বাহিনীর উদ্যোগে আয়োজিত হয় মনোমুগ্ধকর ফ্লাই পাস্ট। যা বিজয়ের আনন্দকে আরও বর্ণিল করে তুলে।মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকার আকাশজুড়ে চলে মনোমুগ্ধকর বিমান বাহিনীর দৃষ্টিনন্দন ফ্লাই পাস্ট প্রদর্শনী। নীল আকাশে গর্জে ওঠা যুদ্ধবিমানের ফরমেশন মুহূর্তেই দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। সৈকতে অবস্থানরত পর্যটক, স্থানীয় বাসিন্দা ও শিশু-কিশোররা মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন এই অনন্য দৃশ্য।ফ্লাই পাস্টে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুটি অত্যাধুনিক এফ-৭ বিডি যুদ্ধবিমান ফরমেশনে অংশগ্রহণ করে। প্রায় ২০ মিনিটব্যাপী এই আকাশ প্রদর্শনীতে ফুটে ওঠে বাহিনীর উচ্চমাত্রার পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও যুদ্ধ প্রস্তুতির সক্ষমতা। সুনিপুণ কৌশলে পরিচালিত এই ফরমেশন ফ্লাইট মহান বিজয় দিবসের চেতনা ও গৌরবকে নতুন মাত্রা দেয়।বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত” এই মূলমন্ত্র ধারণ করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশের আকাশসীমা রক্ষায় সদা প্রস্তুত ও অঙ্গীকারবদ্ধ। ফ্লাই পাস্ট কর্মসূচির মাধ্যমে শুধু সামরিক সক্ষমতার প্রদর্শনই নয়, বরং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাহিনীর দৃঢ় প্রত্যয় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।বিজয়ের মাসে কক্সবাজারের আকাশে এই গর্বের উড্ডয়ন জাতির ইতিহাস, আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতার চেতনাকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এই উদ্যোগ মহান বিজয় দিবস উদযাপনে যোগ করেছে অনন্য মাত্রা, যা দীর্ঘদিন দর্শনার্থীদের স্মৃতিতে গেঁথে থাকবে।