চলমান সীমান্ত সংঘাত থামাতে কম্বোডিয়ার কাছ থেকে একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দাবি জানিয়েছে থাইল্যান্ড। থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারাতি নালিতা আন্দামো মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ব্যাংককে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, থাই ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালানো পক্ষ হিসেবে কম্বোডিয়াকেই প্রথমে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিতে হবে। ব্রিফিংয়ে মারাতি নালিতা আন্দামো আরও বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থলমাইন পরিষ্কারের উদ্যোগে কম্বোডিয়াকে ‘আন্তরিকভাবে’ সহযোগিতা করতে হবে। তবে এ বিষয়ে কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। দুই দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘাত শুরুর অভিযোগ তুলে নিজেদের আত্মরক্ষার কথা বলছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার দায় অন্য পক্ষের ওপর চাপাচ্ছে। আরও পড়ুন>>ট্রাম্পের শান্তিচুক্তি ভেঙে আবার কেন সংঘাতে জড়ালো থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া?সীমান্তে ‘ভূতের শব্দ’ বাজিয়ে ভয় দেখাচ্ছে থাইল্যান্ড, জাতিসংঘে কম্বোডিয়ার অভিযোগথাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘর্ষের নেপথ্যে কী? দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থলসীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধ থেকেই গত ৭ ডিসেম্বর নতুন সংঘর্ষ শুরু হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষে দুই দেশের সেনা ও বেসামরিক নাগরিকসহ অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় আট লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। থাইল্যান্ডের সিসাকেত প্রদেশে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দেওয়া একটি মন্দির এলাকা থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক জ্যাক বার্টন জানান, সেখানে এখনো সংঘর্ষের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তার কথায়, থাই গোলন্দাজ বাহিনীর কামানের গোলা ছোড়া এবং কম্বোডিয়ার গ্র্যাড রকেট ছোড়ার শব্দ স্পষ্টভাবে শোনা যাচ্ছে। ভেঙে গেছে আগের যুদ্ধবিরতি এই সংঘর্ষে ভেঙে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত জুলাইয়ে হওয়া একটি যুদ্ধবিরতি। ওই সময় পাঁচদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামাতে বাণিজ্য শুল্ক আরোপের হুমকি ব্যবহার করেছিলেন ট্রাম্প। সাম্প্রতিক সংঘাত শুরু হওয়ার পরও তিনি হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেন এবং দাবি করেন, শনিবার রাত থেকে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে ব্যাংকক সেই দাবি নাকচ করে দেয় এবং জানায়, সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য কোনো আন্তর্জাতিক চাপ নেই। তিনি বলেন, আমাদের ওপর কেউ চাপ দিচ্ছে না। কে কাকে চাপ দিচ্ছে, আমি জানি না। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য শুল্কের হুমকি দিয়ে থাইল্যান্ডকে সংঘাত বন্ধে চাপ দিচ্ছেন কি না—এ প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এদিকে কম্বোডিয়ার পোইপেট শহরের একটি সীমান্ত চেকপয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় সেখানে আটকে পড়া প্রায় ছয় হাজার থাই নাগরিককে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছে থাইল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ। কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান সিনেট সভাপতি হুন সেন বলেন, থাই বাহিনীর নির্বিচার গোলাবর্ষণ থেকে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার জন্যই ওই চেকপয়েন্ট বন্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে থাই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুরাসান্ত কংসিরি জানান, আটটি সীমান্ত প্রদেশজুড়ে ‘নিরবচ্ছিন্ন সংঘর্ষ’ চলছে। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের সেনারা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ‘দৃঢ় ও সাহসিকতার সঙ্গে’ লড়াই চালিয়ে যাবে। সূত্র: আল-জাজিরাকেএএ/