বিচারকার্য টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের আর্জি জানালেন ইনু

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়ায় ছয় হত্যা, উসকানি, ষড়যন্ত্রসহ আটটি অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে চলছে ষষ্ঠ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ। তবে এ বিচারকার্য টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের জন্য নিজের আইনজীবীর মাধ্যমে আর্জি জানিয়েছেন তিনি।বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এ আবেদন করেন ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। এ বিষয়ে শুনানির পর পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়া যাবে। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করছেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং তার সঙ্গে রয়েছেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদসহ অন্যরা।পঞ্চম দিনের মতো ইনুর বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেন কাশিমপুর কারাগার-২ এর সাবেক ডেপুটি জেলার সাখাওয়াত হোসেন। তিনি পঞ্চম নম্বর ও জব্দতালিকার সাক্ষী। গত ১৫ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে নিজের সাক্ষ্য পেশ করেন তিনি। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন সূত্র্রে পাওয়া তথ্য- এর আগে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে পঞ্চম দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এদিন মামলার পঞ্চম সাক্ষী ও কাশিমপুর কারাগার-২ এর সাবেক ডেপুটি জেলার সাখাওয়াত হোসেন জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি পেশ করেন। একই দিন অবশিষ্ট জবানবন্দি দেন সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের উপপরিদর্শক শাহেদ জোবায়ের লরেন্স। তিনি এ মামলার চতুর্থ নম্বর সাক্ষী। তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে জেরা করেন ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। গত ৮ ডিসেম্বর জবানবন্দি দেন এই উপপরিদর্শক। এদিন সকালে কারাগার থেকে হাসানুল হক ইনুকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তার উপস্থিতিতেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন সাক্ষীরা। তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয় ৭ ডিসেম্বর। ওই দিন জব্দতালিকার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তদন্ত সংস্থার রেকর্ড সংরক্ষণকারী এসআই মো. কামরুল হোসেন। গত ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দিনের জেরা শেষ হয়। ওই দিন দুই নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়া বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহাকে জেরা করেন ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। এর আগের দিন ১ ডিসেম্বর সাক্ষ্য দেন তিনি। আরও পড়ুন: ইনুর বিরুদ্ধে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই, দাবি আইনজীবীর এ মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে একই দিন জবানবন্দি দিয়েছেন মো. রাইসুল হক। তার বাড়ি মেহেরপুরে হলেও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়া শহরের একটি মেসে থাকতেন। ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা ও উসকানিদাতা হাসানুল হক ইনু ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তার কপালেও গুলি লেগেছিল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরেছেন। এছাড়া ছয়জন শহীদ হয়েছিলেন। এসবের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে ইনুর সর্বোচ্চ শাস্তি চান সাক্ষী। এর আগে, ৩০ নভেম্বর মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। একই দিন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে ইনুর করা রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সিফাত মাহমুদ ও মনসুরুল হক। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ইনুর আবেদনটি খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল। গত ২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো হয়। তাদের গুলিতে শহীদ হন শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, উসামা, ব্যবসায়ী বাবলু ফরাজী ও চাকরিজীবী ইউসুফ শেখ। আহত হন বহু নিরীহ মানুষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইনুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। পরে তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ এনে ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) জমা দেয় প্রসিকিউশন।