হাদিকে হত্যাচেষ্টাকারীদের ‘পালাতে সহায়তাকারী’ কে এই ফিলিপ স্নাল!

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা ফিলিপ স্নাল, যাকে ধরতে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযোগ আছে , ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর হামলাকারী ফয়সাল ও আলমগীরকে সহায়তা করেছেন তিনি। তবে তারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়েছেন নাকি এখনও দেশে রয়েছেন- তা নিশ্চিত হওয়া যাবে ফিলিপ স্নালকে গ্রেফতার করতে পারলেই। তাই তাকে গ্রেফতারে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।ফিলিপ হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়ায় বাবার বাড়িতে থাকতেন। তার শ্বশুরবাড়ি নালিতাবাড়ী উপজেলার বারমারি এলাকায়।ঘটনার পাঁচ দিন পার হলেও বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর হামলাকারী ফয়সাল ও আলমগীরের কোনো হদিস পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে, ঘটনার দিন শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাতেই তারা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে গেছে।ময়মনসিংহ বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি জানান, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার গাজীরভিটা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ভুটিয়াপাড়া এলাকা থেকে ফিলিপের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তার দুই সহযোগীকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।আরও পড়ুন: হাদিকে গুলি: পালানোর আগে স্ত্রীর সঙ্গে ফয়সালের গোপন লেনদেন ফাঁস!আটক দুজন হলেন- ভুটিয়াপাড়া এলাকার ক্লেমেন রিছিলের ছেলে সঞ্জয় চিসিম (২৫) এবং বিড়ইডাকুনী এলাকার চার্লস রিছিলের ছেলে সিবিরণ দিও (৩৫)।বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, হামলার পর মিরপুর থেকে একটি প্রাইভেটকারে গাজীপুর হয়ে ময়মনসিংহে আসেন তারা। পরে সেই গাড়ি থেকে নেমে অন্য একটি প্রাইভেটকারে করে হালুয়াঘাট উপজেলার ধারা বাজারসংলগ্ন মুন ফিলিং স্টেশন পাম্পের পাশে পৌঁছান। সেখান থেকে গত শুক্রবার রাতে ফিলিপ স্নাল নামের এক ব্যক্তির মোটরসাইকেলে করে ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয় দুজনকে।তবে ফিলিং স্টেশনের পাশের এলাকা নির্জন হওয়ায় সিসিটিভি ফুটেজে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে সেখানে নামিয়ে দিয়ে মোটরসাইকেলটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়।পরদিন শনিবার থেকেই ফিলিপ স্নালকে ধরতে বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে। তবে এখনও তিনি পলাতক। আলমগীর ও ফয়সাল ভারতে গিয়েছে নাকি দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে রয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।আরও পড়ুন: হাদিকে গুলি: শুটার ফয়সালকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলো র‌্যাবভারত সীমান্তসংলগ্ন গাজীরভিটা ইউনিয়নের ভুটিয়াপাড়া এলাকার দুর্গম পথ পেরিয়েই ফিলিপের বাড়িতে যেতে হয়। তার বাড়ি থেকেই দেখা যায় ভারতের সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া।স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, সীমান্তের কাঁটাতারের নিচে রয়েছে কালভার্ট ও বড় বড় সুরঙ্গ, যা দিয়ে সহজেই সীমান্ত পার হওয়া সম্ভব। ধারণা করা হচ্ছে, এই সুরঙ্গ পথ ব্যবহার করেই ঢাকায় ওসমান হাদির ওপর হামলাকারী আলমগীর ও ফয়সালকে ভারতে পাচার করা হয়েছে।স্থানীয়রা জানান, ফিলিপের মাধ্যমে দুজনকে ভারতে পাচারের বিষয়টি এলাকায় মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। গত বুধবার ফিলিপকে এলাকায় দেখা গেলেও এরপর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। তার বাড়ি থেকে সীমান্তের কাঁটাতারের দূরত্ব প্রায় ২০০ গজ। তিনি প্রায়ই ভারত যাতায়াত করতেন বলে স্থানীয়দের দাবি। এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর এই পথ দিয়েই আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ভারতে পালিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।আরও পড়ুন: হাদিকে গুলি: নরসিংদী থেকে ফয়সাল নামে একজন আটকফিলিপ স্নালের ছোট বোন সালচি স্নাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার মা অসুস্থ ছিলেন। শুক্রবার সকালে ভাই বাড়িতে এলেও বিকেলেই চলে যান। এলাকায় বিল্লাল মেম্বারের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের কারণে আমার ভাইকে জড়িয়ে পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে।’তিনি আরও বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই সঞ্জয় চিসিম ঘরে ঘুমাচ্ছিল। তাকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। যদি সে কোনো অপরাধে জড়িত থাকত, তাহলে কি সে বাড়িতে থাকত?’এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হালুয়াঘাটের ধারা বাজার থেকে যে মোটরসাইকেলে করে অপরাধীদের সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা সন্দেহ করা হচ্ছে, সেই মোটরসাইকেলটি ভুটিয়াপাড়া এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপরাধীরা কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে পালিয়ে গেছে কি না, তা ফিলিপ স্নালকে আটক করতে পারলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।’তিনি আরও বলেন, ‘কার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ হয়েছে, কত টাকা লেনদেন হয়েছে, ওপারে কারা জড়িত, সবকিছুই ফিলিপকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যাবে। শুটিং মিশনে অংশ নেয়া দুজনসহ মানবপাচারে জড়িতদের গ্রেফতারে বিজিবির অভিযান চলছে এবং সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।’