যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের একটি শহরে ভয়াবহ এক পারিবারিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিজিৎ প্যাটেলের (২৮) বিরুদ্ধে ‘ফার্স্ট ডিগ্রি মার্ডার’-এর অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি নিজ বাড়িতে স্লেজহ্যামার (হাতুড়ি) দিয়ে তার বাবা অনুপম প্যাটেলকে (৬৭) হত্যা করেন।মার্কিন গণমাধ্যম সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, থ্যাঙ্কসগিভিং সপ্তাহান্তে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনার সময় অভিযুক্ত অভিজিৎ প্যাটেলের বিরুদ্ধে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ‘অর্ডার অব প্রোটেকশন’ কার্যকর থাকলেও তিনি বাড়িতেই বসবাস করছিলেন। কুক কাউন্টি প্রসিকিউটরদের মতে, গত ২৯ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে অনুপম প্যাটেলের স্ত্রী তার স্বামীকে ঘরের ভেতর রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন পড়ে থাকতে দেখেন। ঘটনার দিন ভোর ৫টা ৪২ মিনিটে অনুপম প্যাটেলের স্ত্রী কাজে বেরিয়ে যান। সে সময় বাড়িতে শুধু বাবা ও ছেলে ছিলেন। অনুপম প্যাটেল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ায় কাজ করতেন না। তার গ্লুকোজ মনিটর স্ত্রীর মোবাইল ফোনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। প্রতিদিন সকাল ৮টার দিকে অনুপম প্যাটেল স্ত্রীকে ফোন করে তার ব্লাড সুগার লেভেল জানাতেন। কিন্তু ঘটনার দিন তিনি ফোন করেননি। মনিটরে ব্লাড সুগারের মাত্রা কমতে দেখে পরে স্ত্রী উদ্বিগ্ন হয়ে স্বামী ও ছেলেকে ফোন করার চেষ্টা করেন, কিন্তু কারও সাড়া পাননি। আরও পড়ুন: সিডনির সমুদ্র সৈকতে হামলায় জড়িতদের একজন ভারতের নাগরিক! পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি বাড়িতে ফিরে দেখেন গ্যারেজের দরজা খোলা। তখন অভিজিৎ প্যাটেল তাকে বলেন, তিনি ‘বাবার দেখভাল করেছেন’ এবং তাকে (মাকে) বাবার কাছে যেতে বলেন। ঘরে গিয়ে স্ত্রী দেখেন, অনুপম রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন। এরপর তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছায় এবং অনুপম প্যাটেলকে মৃত ঘোষণা করে। তারা ঘটনাস্থ থেকে একটি হাতুড়ি উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তে জানা যায়, অনুপম প্যাটেলের মাথায় অন্তত দুইবার আঘাত করা হয়েছিল, যার ফলে তার খুলি ফেটে যায় এবং নাক ভেঙে যায়। পুলিশ পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই অভিজিৎ আত্মসমর্পণ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেন, ছোটবেলায় বাবার দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়ায় তাকে হত্যা করা ছিল তার ‘ধর্মীয় কর্তব্য’। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে তার চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসকদের মতে, এই অভিযোগগুলো ভ্রম বা বিভ্রমজনিত। নথি অনুযায়ী, অভিজিৎ প্যাটেল সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত এবং এর আগেও মানসিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ঘটনার আগে অভিজিৎ প্যাটেলের বিরুদ্ধে তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগে নিষেধাজ্ঞা ছিল, কারণ তিনি আগেও হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। তবে তার বাবা-মা তাকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছিলেন। এই সুরক্ষা আদেশটি ২০২৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর। বর্তমানে অভিজিৎ প্যাটেলকে বিনা জামিনে আটক রাখা হয়েছে এবং তার মায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে ১৯ ডিসেম্বর। সূত্র: এনডিটিভি