বাংলাদেশকে কি পরমাণু শক্তির ‘ভয়’ দেখালেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী? (ভিডিও)

সম্প্রতি এক সমাবেশে ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে পরিচিত পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যকে ‘ভারত থেকে আলাদা’ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। এর পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতের পরমাণু শক্তির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশকে ‘হুমকি’ দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, আসামের মুখ্যমন্ত্রী তথা উত্তরপূর্ব ভারতে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির প্রধান মুখ হিমন্ত বলেছেন, বাংলাদেশ যদি এমন দিবাস্বপ্ন (সেভেন সিস্টার্স আলাদা করার) দেখে, তাহলে ভারতও চুপ করে বসে থাকবে না। সেভেন সিস্টার্স নিয়ে এক বছর ধরেই নানা ধরনের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এসব ভাবে কীভাবে! আমরা এত বড় দেশ। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। কীভাবে সেভেন সিস্টার্স আলাদা করবে?’ নিজের বক্তব্যে কৌশলে ভারতের পরমাণু শক্তির কথা তুলে ধরে আসামের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা পরমাণু শক্তিধর। বাংলাদেশের উচিত সংযত হওয়া। আসলে ওদের চিন্তাভাবনাই খারাপ, এতে আমাদের কিছু করার নেই। আমার মনে হয় ওদের আর সাহায্য করা উচিত নয়। হিমন্তর হুমকি, ‘এভাবে বারবার ভারত নিয়ে বেফাঁস কথা বলে গেলে আমরা কিন্তু চুপ করে বসে থাকব না।’   View this post on Instagram A post shared by Guwahati Unofficial (@guwahati.unofficial)  তিনি অবশ্য আগেও চিকেনস নেক নিয়ে কথা বলার বিষয়ে বাংলাদেশকে হুমিক দিয়েছেন। মে মাসে হিমন্ত বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ যদি ভারতের চিকেনস নেকে নজর দেয়, তাহলে আমরা বাংলাদেশের দুই চিকেনস নেকে হামলা করব। রংপুর, চট্টগ্রাম বন্দর কিন্তু ভারতের থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে।’ আরও পড়ুন: বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারত এদিকে, বাংলাদেশে একটি মহল থেকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ তীব্র ভারত-বিরোধী বয়ান তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে নয়াদিল্লি। একইসঙ্গে, তা সরাসরি ও স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যানও করেছে ভারত সরকার। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াদিল্লির সাউথ ব্লকে অবস্থিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢাকাস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম. রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করে এই অবস্থান জানায় নয়াদিল্লি। শুধু ওই বয়ান প্রত্যাখ্যানই নয়, বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেছে ভারত। কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রায় ৪৫ মিনিট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে ছিলেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার। ওই বৈঠকেই তাকে বাংলাদেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের উদ্বেগ এবং নির্দিষ্ট কিছু বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অবগত করা হয়। বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের কিছু ‘চরমপন্থি গোষ্ঠী’র কার্যকলাপের বিষয়ে দেশটির হাইকমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলো ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় মিশনের আশপাশে নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যা ভারত অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।  আরও পড়ুন: দিল্লির মসনদ জ্বালিয়ে দেয়ার হুঁশিয়ারি হাসনাতের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চরমপন্থি কিছু মহল যে ভুল ও বিভ্রান্তিকর ন্যারেটিভ ছড়ানোর চেষ্টা করছে, ভারত তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে।’ ভারতের অভিযোগ, এই ঘটনাগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এখনো পর্যন্ত কোনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পরিচালনা করেনি, কিংবা ভারতের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য ও অর্থবহ প্রমাণ শেয়ার করেনি। তবে একইসঙ্গে বিবৃতিতে জোর দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্কের শিকড় রয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে, যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক উদ্যোগ এবং মানুষে-মানুষে যোগাযোগের মাধ্যমে আরও সুদৃঢ় হয়েছে। ভারত বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষেই রয়েছে এবং বরাবরই সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে এসেছে। বিবৃতির শেষ অংশে ভারত প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে যে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তাদের কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী বাংলাদেশে অবস্থিত সব বিদেশি মিশন ও কূটনৈতিক পোস্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।  আরও পড়ুন: বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে দিল্লিতে তলব অপ্রত্যাশিত নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কূটনৈতিক মহলের মতে, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর নতুন করে চাপ তৈরি হয়েছে। ভিত্তিহীন অভিযোগ, চরমপন্থি বয়ান কিংবা কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আপস করবে না বলেও জানিয়েছে ভারত।