অপারেটরের অভাবে কুষ্টিয়ার বেসিক সেন্টারে কোটি টাকা মূল্যের কাপড় প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অলস পড়ে আছে। এর ফলে জেলার টেক্সটাইল মিল মালিক ও প্রান্তিক তাঁতিদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপারেটর নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।তাঁতিদের উন্নতমানের কাপড় উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৫৮ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গড়ে তোলা হয় বেসিক সেন্টার। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের এই বেসিক সেন্টারের আওতায় কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার তাঁতিদের অন্তর্ভুক্ত করে উন্নতমানের কাপড় উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কাপড়ের মান উন্নয়নে প্রান্তিক তাঁতিদের সহায়তার জন্য ইংল্যান্ড ও জার্মানি থেকে আনা হয় আট ধরনের আধুনিক মেশিন। এসব মেশিনের মাধ্যমে স্বল্প খরচে সুতা সিঙ্গেল করা থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে কাপড় ক্যালেন্ডার পর্যন্ত সম্পন্ন করা হতো। তবে ২০০০ সালের পর থেকে বেসিক সেন্টারের অধিকাংশ মেশিন নষ্ট হতে শুরু করে। একপর্যায়ে ২০১৫ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্রটির কার্যক্রম। পরে চার জেলার তাঁতিদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে ২০২০ সালে সরকার থ্রি-সার্ভিস সেন্টার প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে এসব যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও স্থাপন করলেও অপারেটর ও অপারেটিং সিস্টেম না থাকায় আধুনিক মেশিনগুলো দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে। আরও পড়ুন: রূপসা তীরে কর্মচাঞ্চল্য, একসঙ্গে ২০ জাহাজ নির্মাণে ব্যস্ত খুলনা শিপইয়ার্ড বেসিক সেন্টারের যন্ত্রপাতি চালু না থাকায় অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে তাঁতি ও টেক্সটাইল মিল মালিকদের। তাঁতিদের অভিযোগ, সুতার কাজ ও লুঙ্গি প্রসেসিংয়ের জন্য জেলার বাইরে অতিরিক্ত খরচে সুতা পার্টিশন ও লুঙ্গি প্রসেস করাতে হচ্ছে। এতে লুঙ্গি উৎপাদনের লাভ কমে যাচ্ছে। একই সমস্যার মুখে পড়েছেন টেক্সটাইল মিল মালিকরাও। তারা জানান, কুমারখালীর টেক্সটাইল মিলগুলোতে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে তিন লাখ তোয়ালে উৎপাদন হয়। এসব তোয়ালের রোলিং ও ওয়াশিংয়ের জন্য জেলার বাইরে পাঠাতে হয়, ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অথচ বেসিক সেন্টারে আধুনিক ডায়িং, রোলিং, ওয়াশিং ও ক্যালেন্ডার মেশিন রয়েছে। সেগুলো চালু করা গেলে কুমারখালী থেকেই তোয়ালে ও বেডশিটের ডায়িং, রোলিং ও ওয়াশিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হতো। এদিকে বেসিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আধুনিক মেশিন দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী বেসিক সেন্টারের মহাব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান বলেন, মাঝে মাঝে মেশিনগুলো ট্রায়াল দেয়া হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে অপারেটর নিয়োগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে। তাঁত বোর্ডের কুষ্টিয়া সেন্টারের তথ্যমতে, জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সংখ্যা ১০৭টি।