কাফিং সিজনের প্রেম, কেন শীত শেষ হতেই সম্পর্ক ফিকে হয়ে যায়

শীতে যতই মন বিষণ্ণতায় ঢেকে যাক, এই সময়েই আবার অদ্ভুতভাবে রং লাগে জীবনে। পাতা ঝরার এই মৌসুমে মানুষের মনে আবেগ যেন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। গবেষণাও বলছে, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতে মানুষ বেশি প্রেমে পড়ে। উইন্টার ব্লুজ বা একাকিত্বের শীতলতা কাটাতে মন তখন উষ্ণতার খোঁজে থাকে-একজন কাছের মানুষ, একটু সান্নিধ্য, একটু ভালোবাসা। পারদ যত নামতে থাকে, ততই যেন সঙ্গীর প্রয়োজন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার ইচ্ছে জাগে, পুরোনো সম্পর্কও হয়ে ওঠে আরও ঘনিষ্ঠ। ঠিক এই কারণেই ডেটিংয়ের দুনিয়ায় শীতের কদর আলাদা। ডেটিং অ্যাপ থেকে শুরু করে বাস্তব জীবন-সব জায়গাতেই এই সময় সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। তাই তো শীতকালকে বলা হয় ডেটিংয়ের ‘কাফিং সিজন’-যখন একাকিত্ব এড়িয়ে মানুষ ভালোবাসার উষ্ণতায় নিজেকে বেঁধে ফেলতে চায়। কাফিং সিজনে বেশি মানুষ কেন প্রেমে পড়েন?একটি জনপ্রিয় ডেটিং অ্যাপের সমীক্ষা অনুযায়ী, নভেম্বরের শেষ দিক থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ পর্যন্ত সম্পর্কের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেড়ে যায়। এই সময়টাকেই ডেটিংয়ের ভাষায় বলা হয় কাফিং সিজন। কিন্তু প্রশ্ন হলো-শীতকাল এলেই মানুষ কেন বেশি প্রেমে পড়েন? বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে রয়েছে আবহাওয়া ও মানসিক অবস্থার সরাসরি প্রভাব। শীতকালে দিন ছোট হয়ে যায়, রাত দীর্ঘ হয় এবং তাপমাত্রাও কম থাকে। এই পরিবর্তন মানুষের শরীরের হরমোনের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন হরমোনের তারতম্যের কারণে অনেকেরই মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠে। এর ফল হিসেবে দেখা দেয় মন খারাপ, একাকিত্ব আর বিষণ্ণতা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার’ (স্যাড)। এই মানসিক অস্বস্তি কাটাতেই অনেকেই সম্পর্কের উষ্ণতা খুঁজতে শুরু করেন। একজন সঙ্গীর সান্নিধ্য, কথা বলা, সময় কাটানো-এসবই তখন একাকিত্বের শীতলতা ভাঙার উপায় হয়ে ওঠে। তাই কাফিং সিজনে প্রেমে পড়া শুধু আবেগের বিষয় নয়, এর পেছনে রয়েছে শরীর ও মনের জৈবিক এবং মানসিক প্রয়োজনও। শীতের ঠান্ডা দিনে উষ্ণতার খোঁজেই মানুষ বেশি করে ভালোবাসার দিকে ঝুঁকে পড়ে। কাফিং সিজনের প্রেম ভাঙতে পারে যখন-তখনশীতের নরম রোদ গায়ে মেখে সঙ্গীর সঙ্গে মনের কথা বলতে কার না ভালো লাগে! কাফিং সিজনের কয়েকটা মাসে সম্পর্ক যেন অন্যরকম রঙিন হয়ে ওঠে। ঠান্ডার দিনে একসঙ্গে সময় কাটানো, গল্প করা, উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া-সব মিলিয়ে শুরুটা বেশ মধুর হয়। একে অপরকে জানার আগ্রহ, কাছাকাছি থাকার তাগিদ আর একাকিত্ব কাটানোর স্বস্তি মিলিয়ে সম্পর্ক তখন বেশ স্বাভাবিক ও সুন্দর মনে হয়। কিন্তু রিলেশনশিপ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রেম অনেক সময়ই স্থায়ী হয় না। কারণ কাফিং সিজনের সম্পর্কের বড় অংশই তৈরি হয় আবহাওয়া ও মানসিক চাহিদার প্রভাবে। শীত কেটে গেলে, দিন বড় হলে এবং জীবন আবার আগের ছন্দে ফিরলে সম্পর্কের সমীকরণ বদলে যেতে শুরু করে। তখন বোঝা যায়, সম্পর্কটা আসলে কতটা গভীর আর কতটা শুধু একাকিত্ব কাটানোর উপায় ছিল। কাফিং সিজনের প্রেম টক্সিক হয়ে ওঠে কেন?শীতে অনেকের মধ্যেই অবসাদ ও একাকিত্ব কাজ করে। দিন ছোট হয়ে আসে, রাত দীর্ঘ হয়, সামাজিক মেলামেশাও কমে যায়। এই মানসিক শূন্যতা দূর করতেই অনেকেই দ্রুত কোনো পার্টনার খুঁজতে শুরু করেন। আর ঠিক এখানেই তৈরি হয় সমস্যার বীজ। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাফিং সিজনে সম্পর্কের অনেকটাই গড়ে ওঠে মানসিক প্রয়োজন থেকে, ভালোবাসার গভীরতা থেকে নয়। শীতের একাকিত্ব কাটাতে যাকে খুব প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়, কাফিং সিজন শেষ হলেই সেই প্রয়োজন কমে যায়। বসন্ত আসার সঙ্গে সঙ্গে মনও হালকা হয়ে ওঠে, সামাজিকতা বাড়ে। তখন দেখা যায়, যে মানুষটিকে দু’মাস আগেও খুব আপন মনে হচ্ছিল, তার সঙ্গেই থাকতে অসহ্য লাগছে। এর ফলেই শুরু হয় বিরক্তি, অতিরিক্ত নির্ভরতা, দখলদারিত্ব বা হঠাৎ দূরত্ব তৈরি হওয়া। একপক্ষ যদি আবেগে বেশি জড়িয়ে পড়ে আর অন্যপক্ষ সম্পর্কটিকে সাময়িক ভেবে নেয়, তাহলে সেই সম্পর্ক সহজেই টক্সিক হয়ে ওঠে। এ কারণেই রিলেশনশিপ বিশেষজ্ঞরা কাফিং সিজনে ক্যাজ়ুয়াল ডেটিং থেকে সাবধান থাকতে বলেন। এই সমস্যা যেভাবে এড়াবেন শীতকালে সম্পর্ক শুরু করার আগে নিজের মানসিক অবস্থাকে ভালোভাবে বোঝা অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র একাকিত্ব বা মন খারাপ কাটানোর জন্য কাউকে পার্টনার হিসেবে বেছে নিলে সেই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই নিজেকে প্রশ্ন করুন-আমি কি সত্যিই এই সম্পর্ক চাই, নাকি কেবল একাকিত্ব দূর করতে চাই? শীতকালে ‘স্যাড’ বা উইন্টার ব্লুজ প্রভাবিত করতে পারে, তাই প্রথমে নিজেকে শান্ত ও স্থিতিশীল রাখুন। সম্পর্ক শুরু করার আগে ভাবুন-এটি কি কেবল সাময়িক মজা, নাকি সত্যিই দীর্ঘমেয়াদি বন্ধন? সঙ্গীর প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা বা প্রবল আবেগ দেখানো থেকে বিরত থাকুন। নিজের আবেগ ও চাহিদা বোঝা এবং নিয়ন্ত্রণ রাখলে সম্পর্ক শীত শেষে বেশি স্থিতিশীল থাকবে। সূত্র: বিবিসি, আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিন,ভেরিওয়েল মাইন্ড আরও পড়ুন:সম্পর্কে ব্যক্তিস্বাধীনতা না থাকলে কী হয় সঙ্গী আপনাকে ‘পকেটিং’ করছে বুঝবেন যেভাবে  এসএকেওয়াই/