উন্নত জীবনের আশায় প্রতিবছর বিদেশে পাড়ি জমাতে চান হাজারো বাংলাদেশি। কিন্তু, বৈধ পথের পরিবর্তে অবৈধ অভিবাসনের ফাঁদে পড়ে প্রতিবছরই মানুষ হারায় জীবন, হরায় সর্বস্ব। সমুদ্রপথে ইউরোপে পাড়ি জমানো মোট অবৈধ অভিবাসীর ৩০ শতাংশই বাংলাদেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ অভিবাসন শুধু ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডিই নয় দেশের অর্থনীতি ও কূটনীতির জন্যও হয়ে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ।দালালের আশ্বাস আর স্বপ্নের মোড়কে সমুদ্রপথে ঝুকিপূর্ণ যাত্রা। এই নৌকাগুলো শুধু মানুষ বহন করে না, বহন করে অনিশ্চয়তা আর মৃত্যুর সম্ভাবনা। অবৈধ উপায়ে প্রবাসে গিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে গিয়ে থমকে যায় জীবন। নিঃস্ব হয় বহু পরিবার ও ভিটেমাটি।কারো স্বপ্ন বন্দি হয় কফিনে। বিদেশের মাটি না ছুঁয়েই দেশে ফেরে নিথর দেহ। বিমানবন্দরে স্বজনদের কান্না আর আহাজারি যেন প্রশ্ন তোলে এই মৃত্যুর দায় কার?হিসেব বলছে সমূদ্রপথে অবৈধ উপায়ে ইউরোপে পাড়ি জমানো অভিবাসীর সংখ্যায় পুরো বিশ্বকে পেছনে ফেলে শীর্ষে বাংলাদেশ। মোট অবৈধ অভিবাসীর ৩০ শতাংশই বাংলাদেশি। কোনমতে পৌঁছাতে পারলেও শেষ রক্ষা হয় না। ভুয়া কাগজপত্র কিংবা ভিসা জটিলতায় প্রতিবছর ভিনদেশে কারাবন্দি হয় অসংখ্য বাংলাদেশি। ভাগ্য অনুকূলে থাকলে সামাজিক অপমান আর তীব্র হতাশাকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরেন তারা। নির্মম নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়ান আজীবন।আবার বৈধ কাগজপত্র থাকলেও অদক্ষতার করণে শূন্য হাতে অনেককে দেশে ফিরতে হয় জানিয়ে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন অভিবাসন প্রক্রিয়ার পথ অবৈধ হয়, তখন শুধু মানবিক সংকটই নয় তা রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন তোলে।আরও পড়ুন: স্বপ্নের ইউরোপ যাত্রা /পরিচয় মিলল তিউনিসিয়ায় মৃত ৮ বাংলাদেশিরঅভিবাসন বিশেষজ্ঞ শরিফুল হাসান বলেন, সব সরকার আমলেই উন্নয়নের গল্প। আপনি যদি এতই উন্নয়ন করেন তাহলে আপনার দেশের লোকজন সারা পৃথিবীর মধ্যে ইউরোপে যাওয়ার জন্য সাগর পথে পাড়ি দেয়ায় প্রথম কেনো ? তার মানে এই উন্নয়নের গল্পের কোথাও সংকটটা রয়েছে। বিদেশে সেহেতু অবৈধভাবে থাকে, কাগজপত্র ঠিক থাকে না। তখন কিন্তু সে আয় করলেও বৈধভাবে দেশে টাকা পাঠাতে পারে না।নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজের গবেষক ড. জালাল উদ্দিন শিকদার বলেন, অবৈধভাবে গিয়ে কাজ পেলেও তাকে অনেক স্ট্রাগল করতে হচ্ছে। আবার বৈধ পথে যারা গেছে। তারাও গিয়ে দেখে তাদের কোনো কোম্পানিই নাই। তার মানে বৈধ পথে গেছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজটা সে পাচ্ছে না। যার কারণে সে বিপদে পড়ছে।তরুণদের দক্ষতাবৃদ্ধি ও বৈধ অভিবাসনের পথ সহজ না করলে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সংকুচিত হতে পারে বলে আশঙ্কা বিষেশজ্ঞদের।এ ব্যাপারে ড. জালাল উদ্দিন বলেন, অদক্ষ শ্রমিককেও তারা দক্ষ হিসেবে দেখতে চাচ্ছে। এটলিস্ট যেনো তারা ল্যাঙ্গুয়েজটা জানে।