সিলেটের বুযুর্গ আলেম মুফতি ইউসুফ শ্যামপুরী রহ.

ইতিহাসের পাতায় কত আকাবিরের সাওয়ানেহ ও কত মনীষীদের জীবনী লেখা হয়েছে। তাদের কীর্তি-কারনামা ও দান-অবদান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আমরা তাদের পথ অবলম্বন করে টুকরো টুকরো কিছু কথা ও কিছু স্মৃতি নিবেদন করলাম।আমরা সকলে আল্লাহ তায়ালার এক মহান সৃষ্টি; মাটির তৈরি মাটির মানুষ। জীবনের সূচনাকাল থেকেই তিনি সকলের জন্য একটা নির্ধারিত বয়স ও সময়সীমা বেধে দিয়েছেন যা আমরা কেউ জানি না। একজন আসবে একজন যাবে। আসা-যাওয়ার সেই পালাক্রম,জন্ম-মৃত্যর সেই সিলসিলা পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই জারি আছে।আছে সৃষ্টিশীল এবং মরণশীল। এটাই পৃথিবীর চিরন্তন বাস্তবতা ও চিরাচরিত নিয়ম। আমাদের হুজুর সিলেটের প্রখ্যাত বুযুর্গ আলেম,মাদরাসাতুল উলূম দারুল হাদিস হরিপুর মাদরাসার দীর্ঘদিনের শায়খুল হাদিস হজরত মাওলানা মুফতি ইউসুফ শ্যামপুরীও রহ.তেমনি একজন মাটির তৈরি মাটির মানুষ ছিলেন। তারও বেধে দেওয়া একটা নির্ধারিত বয়স ও সময়সীমা ছিল। মাওলা পাকের ডাক ও দাওয়াত এসেছে। ১২ জিলকদ ১৪৪৪ হিজরি মোতাবেক ২ জুন ২০২৩ ঈসায়ী তিনি মাওলা পাকের ডাকে ও দাওয়াত কবুল করে চিরশান্তির নিবাস আখেরাতের সফরে রাওয়ানা হয়ে গেছেন। আল্লাহ তাঁকে পূর্ণ মাগফিরাত নসীব করুন। তাঁর কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দিন। আমিন। তার জীবন ও কর্ম আমাদের সকলের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। তার চিন্তা ও চেতনা পূর্ববর্তী যুগের আসলাফ-আকাবিরের জীবন্ত- স্মারক। যে যুগের যুগের আকাবিরদের জীবন ছিল ইলম-আমল, ইসলাহ ও দাওয়াতের পূণ্যময় আলোয় উদ্ভাসিত। হিংসা-বিদ্বেষ ও লোভ-লালসায় ভরা এই ধূলিময় পৃথিবীর সাথে যাদের ছিল না কোন-ই সম্পর্ক। যারা এই পৃথিবীতে থেকেও যেন বিচরণ করেছিলেন ঊর্ধ্ব জগতে।   তার আকিদা-বিশ্বাসের দৃঢ়তা, নীতি- আদর্শের অবিচলতা,আল্লাহর প্রতি মহব্বত-ভালোবাসা, সুন্নতের ইত্তেবা-অনুসরণ, মুনাজাতে আকুলতা-ব্যাকুলতা, নামাযে একাগ্রতা-প্রাণবন্ততা, কথায়-কাজে সততা-সত্যবাদিতা, আচরণ-উচ্চারণে বিনয়-নম্রতা, দুনিয়ার প্রতি বে-ইহতিয়াজি-নির্মুখাপেক্ষিতা, পদ-পদবীর প্রতি নির্লিপ্ততা-নির্মোহতা, সাদেগি যিন্দেগী-অনাড়ম্বর জীবন,তাকওয়া-পরহেযগারি,উন্নত রুচি-স্বভাব,ধৈর্য-সহনশীলতা, দায়িত্বসচেতনতা,মানুষের সেবা ও কল্যাণচিন্তা, দ্বীনী গায়রত ও হামিয়্যাত, নির্জন ইবাদত-বন্দেগি ইত্যাদি বিষয় পূর্বসূরীদের যুগ ও ইসলামী ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মনীষীদের স্বরণকে তাজা ও চেতনাকে জাগরুক করে তুলতো। যাদের কর্ম-কীর্তি ও কারনামা-অবদান আজও তারিখ ও তারাজিমের কিতাবে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে অক্ষত আছে। তাকে দেখে ধারণা করা যেত-বদ দ্বীনী ও ধর্মহীনতার এই যামানায় এবং ইলম ও আমল শূন্যতার এই যুগেও যদি ঈমান-আমলে মজবুত, আকিদা বিশ্বাসে দৃঢ় ও উন্নত আখলাক-চরিত্রের অধিকারী এমন ব্যক্তি পাওয়া যায় তাহলে ইসলামের সোনালী যুগে সালাফের কী অবস্থা ছিল, যারা সরাসরি সাহাবা-তাবেয়ী থেকে তরবিয়ত হাসিল করেছেন। তাঁদের থেকে ঈমান-আমল ও আদব-আখলাকের সবক নিয়েছেন। তাঁদের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেছেন! আরও পড়ুন: ওমরাহ পালন করে আবেগঘন বার্তা দিলেন টিকটক কিং খাবি লেইম তাকে দেখে বিশ্বাস হতো -সেই যুগের ইলম ও মহাত্ন্যের অধিকারী, ত্যাগী-আত্নত্যাগী ও সংগ্রামী বীর ব্যক্তিদের সম্পর্কে তারাজিমের কিতাবসমূহে যেসব বিবরণ রয়েছে তা অকাট্য সত্য। তাতে বিন্দু মাত্র কোন সন্দেহ নেই। মিথ্যা ও কাল্পনিকতার সামান্যতম কোন প্রলেপও নেই। শায়খুল হাদীস  মাওলানা মুফতি ইউসুফ রহ.-এর ইন্তেকালের কয়েক বছর পার হয়েছে। তার ওজুদ আমাদের জন্য আল্লাহ তায়ালার বিরাট নেআমত ছিল। সংক্ষিপ্ত পরিচয় তিনি ৫ এপ্রিল ১৯৪৪ সালে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর থানার হরিপুর এলাকার অন্তর্গত হেমু দক্ষিণ ভেলোপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। কর্মজীবন  হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে একাধারে সাত বছর দারুল উলূম হেমু মাদ্রাসায় ইলমে দ্বীনের খেদমত করেন। তারপর তিনি চলে আসেন তার উস্তাদ মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা শায়খ আব্দুল্লাহ হরিপুরী রহ. এর মাদরাসায়। ১৩৮৭ বাংলা থেকে হরিপুর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস হিসাবে পরবর্তী কর্মজীবন শুরু করেন। তার উস্তাদ আল্লামা শায়খ আব্দুল্লাহ হরিপুরী রহ. এর জীবদ্বশায় তিনি মুসলিম শরীফের পাঠদানের দায়িত্ব পালন করেন। শায়খ হরিপুরী রহ. এর ইন্তেকালের পর ১৪০৫ বাংলায় আল্লামা শায়খ মুফতি মুহাম্মদ ইউসুফ শ্যামপুরী শায়খুল হাদীসের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি ইন্তেকাল পর্যন্ত হরিপুর মাদরাসার শায়খুল হাদীস ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে। তিনি ১২ জিলক্বদ ১৪৪৪ হিজরী মোতাবেক ২ জুন ২০২৩ ঈসায়ী মহান রাব্বে কারীমের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন। রয়ে গেছে তাঁর কর্ম-কীর্তি ও কারনামা অবদান। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে পূর্ণ মাগফিরাত নসীব করুন। তার কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দিন এবং আমাদের সকলকে সীরাতে মুসতাকিমের উপর অটল-অবিচল রাখুন। আমিন। সূত্র: শায়খুল হাদিস হজরত মাওলানা মুফতি ইউসুফ শ্যামপুরী রহ.;  কিছু কথা কিছু স্মৃতি লেখক: খিররিজ, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা