কখন যে একটা হাসিখুশি শিশু ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়তে শুরু করে, তা অনেক সময় চোখে পড়ে না। বাইরে থেকে সব ঠিকঠাক মনে হলেও তাদের ভেতরে জমে উঠতে পারে চাপ, কষ্ট আর একাকিত্ব।সম্প্রতি হলিউড অভিনেতা ও পরিচালক রব রাইনার ও তার স্ত্রী মিশেলের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা আবার সামনে এনে দিয়েছে এই কঠিন সত্য। পরিবার–ঘনিষ্ঠদের ভাষ্য অনুযায়ী, তাদের ছেলে নিক রাইনার দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অসুস্থতা ও নেশায় আসক্তির সঙ্গে লড়ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তার অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছিল- এমন আশঙ্কাও ছিল। এই ঘটনা মনে করিয়ে দেয়, শিশু ও তরুণদের মনের ভেতরের কষ্ট সময়মতো বুঝতে না পারলে তার পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে। চলুন জেনে নিই সন্তানের বিষণ্নতার কিছু আগাম লক্ষণ যা সময়মতো বুঝতে পারলে বড় বিপদ ঠেকানো সম্ভব- আবেগের ছোট ছোট বদল হতে পারে বড় সংকেতশিশুর মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি সেই মনখারাপ দিনের পর দিন থাকে, তাহলে বিষয়টা হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। অনেক শিশু নিজের অনুভূতি গুছিয়ে বলতে পারে না। তখন তারা চুপচাপ হয়ে যায়, অকারণে রেগে যায়, নিজেকে দোষ দিতে থাকে বা সবকিছুতেই আগ্রহ হারায়। প্রায় প্রতিদিন যদি এমন দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে- ভেতরে কিছু একটা ঠিক নেই। আরও পড়ুন: ডিপ্রেশন কেন হয়? ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়াবিষণ্নতায় ভোগা শিশুরা অনেক সময় কথা বলা কমিয়ে দেয়। পরিবার বা বন্ধুদের এড়িয়ে চলে। আগে যেসব খেলাধুলা, গান, আঁকা বা প্রিয় কাজ ছিল, সেগুলো আর ভালো লাগে না। তখন তারা ঘরের দরজা বন্ধ করে একা থাকতে চায়, ডাকলে সাড়া দেয় না, মেজাজ হঠাৎ বদলে যায়। এটাকে শুধু ‘বদমেজাজ’ বা ‘কিশোর বয়সের ঝামেলা’ ভেবে এড়িয়ে গেলে বড় ভুল হতে পারে। অনেক সময় এটাই তাদের নীরব সাহায্যের ডাক। পড়াশোনা আর শরীরও ইঙ্গিত দেয়মন ভালো না থাকলে পড়াশোনায় তার প্রভাব পড়বেই। শিশুরা তখন মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না, ফলাফল খারাপ হতে থাকে, স্কুলে যেতে অনীহা দেখা দেয়। পাশাপাশি শরীরেও নানা সংকেত দেখা যায় - বারবার মাথাব্যথা, পেটব্যথা, খাওয়ার রুচি বদলে যাওয়া বা ঘুমের সমস্যা। এসব অভিযোগ যদি ঘন ঘন হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে সমস্যাটা শুধু শরীরের নয়, মনেরও। আরও পড়ুন: সকালের এই ৫ অভ্যাসেই দূর হবে বিষণ্ণতা কখন দেরি করা যাবে নাবড় শিশু বা কিশোরদের ক্ষেত্রে বিষণ্নতার সঙ্গে নেশা, বেপরোয়া আচরণ বা নিজের ক্ষতি করার চিন্তাও আসতে পারে। কেউ যদি বারবার মৃত্যুর কথা বলে, জীবন নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বা নিজেকে শেষ করে দেওয়ার ইঙ্গিত দেয় - তাহলে আর অপেক্ষা নয়। সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া দরকার। এই সময়ে বাবা–মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাগ না করে শান্তভাবে কথা বলা, মন দিয়ে শোনা, দোষ না চাপিয়ে পাশে থাকা - এগুলোই শিশুকে ভরসা দেয়। সময়মতো সাহায্য পেলে অনেক বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। নীরবে কষ্ট পেতে না দিয়ে, আগেভাগেই হাত বাড়িয়ে দেওয়াই পারে একটি জীবন বদলে দিতে।