নেত্রকোনার পূর্বধলায় এক টিকটকারের বিরুদ্ধে নারী লাঞ্ছনার ভুয়া ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিভিন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য পরে অভিযুক্তরা ক্ষমা চেয়ে আরও একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। সচেতন মহলের মতে, এসব ঘটনায় সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়াসহ বিভ্রান্তি ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।পূর্বধলা থানা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নছিবপুর গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে হানিফ (১৩), নারায়ণডহর গ্রামের মৃত আজাদ মিয়ার যমজ ছেলে রাকিব (১৯) ও রোমান (১৯) ‘রাকিব স্কেটিং ব্লগ’ নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পেজ চালায়। ওই পেজে তারা নানা ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ভিডিও পোস্ট করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় হানিফকে মেয়ে সাজিয়ে রাকিব তাকে শ্লীলতাহানি করছে এমন একটি ভিডিও গত ১৫ ডিসেম্বর ফেসবুকে আপলোড করা হয়। ভিডিওটি ভাইরাল হলে নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং নেতিবাচক মন্তব্যের ঝড় ওঠে। বিষয়টি পুলিশের নজরে এলে তারা তদন্ত শুরু করে। পুলিশের তৎপরতা টের পেয়ে অভিযুক্ত তিনজনই পালিয়ে যায়। এরপর তারা ক্ষমা চেয়ে আরও একটি ভিডিও আপলোড করে। কিন্তু তবুও সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ধরনের মানসিকতা কিশোরদের যেমন বিপথে নিচ্ছে, তেমনই মিথ্যা ঘটনার ভিড়ে সমাজের সত্য ঘটনাগুলো আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। ফলে প্রকৃত ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। তাই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও ন্যক্কারজনক কাজের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে। আরও পড়ুন: নেত্রকোনায় তিন স্থানে রহস্যজনক আগুন, পুড়ে মরল ২৯ ছাগল জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলুয়ারা বেগম বলেন, ‘মিথ্যা ঘটনায় সত্য ঘটনা আড়ালে পড়ে যায়। নারী নির্যাতন অহরহ ঘটছে, কিন্তু সব ঘটনার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না, বিচার তো দূরের কথা। এমন ফানি ভিডিও দেখে নির্যাতন আরও বেড়ে যাবে, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম যা ইচ্ছে তাই করার সাহস দেখাচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে কঠিন ও জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করতে হবে।’ ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পূর্বধলা উপজেলার নারায়ণডহর গ্রামে একটি ভ্যানের ওপর থাকা বোরকা পরা এক তরুণীকে (মূলত ছদ্মবেশে থাকা কিশোর হানিফ) শ্লীলতাহানি করছে স্কেটিং করা এক তরুণ। এ বিষয়ে পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘রাকিব এবং রোমান আপন দুই ভাই। তাদের বাবা প্রতিবন্ধী কার্ডধারী। কিন্তু তারা তিনজন মিলে প্যান্ট খুলে নেয়াসহ নানা বাজে ভিডিও বানিয়েছে। আমরা খোঁজ পেয়েই সেগুলো সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করছি। বর্তমানে পেজটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘটনার পর থেকে তারা আত্মগোপনে রয়েছে। তবে তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।’