মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে রিক্রুটিং এজেন্ট নির্বাচনের মানদণ্ড কেন অবৈধ নয়, জানতে চেয়ে হাইকোর্টের রুল

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের আরোপিত নতুন ১০টি শর্ত কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষকে এই রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। গত ১৮ নভেম্বর মালয়েশিয়া সরকারের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ওই ১০টি শর্ত ঘোষণা করে। এই শর্তগুলোকে বৈষম্যমূলক ও অযৌক্তিক দাবি করে আফিয়া ওভারসিজসহ তিনটি রিক্রুটিং এজেন্সি হাইকোর্টে রিট করে। আবেদনকারীদের পক্ষে বৃহস্পতিবার শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। আবেদনকারী সংস্থাগুলোর দাবি, এই শর্তগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা পূরণ করা সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর জন্য অসম্ভব। তাদের প্রধান অভিযোগগুলো হলো: নতুন মানদণ্ডগুলো মূলত বড় কয়েকটি সংস্থাকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে যা বাজারে 'সিন্ডিকেট' প্রথাকে উৎসাহিত করবে, কঠোর শর্তের কারণে অধিকাংশ বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে। আরও পড়ুন: ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে পাঠানো হয় রাশিয়ার যুদ্ধে এছাড়া আদালতে যেসব শর্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: এজেন্সির কমপক্ষে ৫ বছরের লাইসেন্স ও সন্তোষজনক ট্র্যাক রেকর্ড, গত ৫ বছরে বিদেশে অন্তত ৩ হাজার কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতা, একই সময়ের মধ্যে অন্তত তিনটি ভিন্ন দেশে কর্মী পাঠানোর রেকর্ড, গন্তব্য দেশগুলো থেকে 'সুশৃঙ্খল আচরণের' সার্টিফিকেট ও কমপক্ষে ১০ হাজার বর্গফুটের স্থায়ী অফিস ও নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকা। মালয়েশিয়া সরকারের অবস্থান থেকে গত ২৭ অক্টোবর মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (উইজমা পুত্র) একটি কূটনৈতিক নোটের মাধ্যমে উৎস দেশগুলোকে এই শর্তগুলো পালনের নির্দেশ দেয়। দেশটির দাবি বিদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং নৈতিক মান বজায় রাখাই এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য। তবে এই নীতিমালার বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়কে (কেসুমা)। আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ / বাংলাদেশের ২৫ এজেন্সির তালিকা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে গুজব এর আগে ২০২১ সালের সমঝোতা স্মারকের অধীনে মাত্র ১০৩টি এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও অর্থপাচারের অভিযোগ উঠেছিল। ভুক্তভোগী ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মতে, সিন্ডিকেটের কারণে অনেক কর্মী প্রায় ২৫ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত অতিরিক্ত ফি দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন এবং ঋণের জালে আটকা পড়েছেন। হাইকোর্টের এই রুলের ফলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর ভবিষ্যৎ প্রক্রিয়া এখন আইনি সিদ্ধান্তের ওপর ঝুলে রইল।