হাদি হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি যে আহ্বান জানালেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান

ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় দ্রুত, নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আল জাজিরা।আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে তুর্ক বলেন, আমি হাদিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হামলার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত, পক্ষপাতহীন, গভীর ও স্বচ্ছ তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’ ভলকার তুর্ক আরও বলেন, মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে এমন সহিংস ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদির মৃত্যুর পর বাংলাদেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। কিছু ভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলার খবর পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে অস্থিরতা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তার অধিকার সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান।  ৩২ বছর বয়সি হাদি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের একজন সম্মুখ সারির নেতা ছিলেন। তিনি ইনকিলাব মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের মুখপাত্র ছিলেন এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে রাজধানী ঢাকার বিজয়নগর এলাকার ঢাকা-৮ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করছিলেন। গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) নির্বাচনী প্রচারণাকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। আরও পড়ুন: ওসমান হাদির মৃত্যুতে ব্রিটিশ হাইকমিশনের শোক পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানা যায়, গুলি ওসমান হাদির মাথার ডান দিক থেকে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে, তবে অংশবিশেষ এখনও তার ব্রেনে রয়েছে।   এই অবস্থার মধ্যেই পরিবারের ইচ্ছায় তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সবশেষ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয় ওসমান হাদিকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) মারা যান তিনি। আজ হাদির লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাকে বহনকারী বিমানটি সন্ধ্যা ৫টা ৪৯ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়, শহীদ ওসমান হাদিকে বহনকারী গাড়ি বিমানবন্দর থেকে হিমাগারের উদ্দেশে গেছে। সেখানে শহীদ ওসমান হাদিকে রেখে ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীরা শাহবাগে এসে অবস্থান নেবে। আরও পড়ুন: ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইনকিলাব মঞ্চ জানায়, পরিবারের দাবির ভিত্তিতে শহীদ ওসমান হাদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাহিত করার এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বাদ জোহর জানাজার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে শুক্রবারের পরিবর্তে আগামীকাল (শনিবার) মিছিলসহ হাদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল মসজিদে নেয়া হবে। জানাজা শেষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন হাদি।