সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় সাহসী পাচ্ছে হামলাকারীরা: আর্টিকেল নাইনটিন

দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলার এবং দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন। সংস্থাটি বলেছে, ধারাবাহিক এসব সহিংস হামলার পেছনে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা হামলাকারীদের আরও সাহসী করে তুলছে। আর্টিকেল নাইনটিনের মতে, এর মাধ্যমে দেশে ভিন্নমত দমনের একটি বিপজ্জনক সংস্কৃতি ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর এসব সহিংস হামলার ঘটনা ঘটে। এদিন রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে ফার্মগেটে দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়েও হামলা হয়, যেখানে আগুনের মধ্যে আটকে পড়েন সাংবাদিক ও কর্মীরা। তাদের উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সহিংসতার মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই গণমাধ্যম প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারকে শুক্রবার তাদের ছাপা ও অনলাইন সংস্করণ প্রকাশ সাময়িকভাবে স্থগিত করতে হয়— যা আর্টিকেল ১৯ নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছে। একই সময় ডেইলি স্টারের কার্যালয়ের সামনে নিউ এজ সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীরকে হেনস্তা করা হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হামলা শুধু গণমাধ্যমেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক ছায়ানটেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এটি সারাদেশে শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাড়তে থাকা সহিংসতারই প্রতিফলন। আর্টিকেল নাইনটিনের মতে, এসব ঘটনা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের দায়মুক্তির সংস্কৃতির অংশ, যেখানে সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে হুমকি, নজরদারি, অপপ্রচার ও শারীরিক হামলার বিচার হয় না। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা হামলাকারীদের আরও সাহসী করছে এবং ভিন্নমত দমনের সংস্কৃতি স্বাভাবিক করে তুলছে। সংগঠনটি স্মরণ করিয়ে দেয়, আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদ (আইসিসিপিআর) এবং বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা। বর্তমান হামলাগুলো এ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সরাসরি লঙ্ঘন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অবিলম্বে গণমাধ্যম, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা মোতায়েন করতে এবং হামলা ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত, কঠোর ও স্বচ্ছ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আর্টিকেল ১৯। সংগঠনটি সতর্ক করে বলেছে, সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দায়মুক্তির সংকট আরও গভীর হবে এবং ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জেপিআই/এমএএইচ/