শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আধিপত্যে জিম্মি খুলনা নগরী, জামিনে বেরিয়ে ফের অপরাধ

একের পর এক অপরাধে প্রতিনিয়ত সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে খুলনা নগরী। অভ্যুত্থানের পর গত ১৬ মাসে ঘটেছে ৪৯টি খুনের ঘটনা। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর দৌরাত্ম্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তার আর মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে একের পর এক খুনের ঘটনায় রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছেন নগরবাসী।সর্বশেষ গত ৩০ নভেম্বর আদালত চত্বরের জনাকীর্ণ এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে জোড়া খুনের ঘটনা নগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপের এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় দুদিন পার হলেও এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি, যদিও পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। স্থানীয়রা বলছেন, যেখানে বিচারালয়ের আঙিনায় মানুষ নিরাপদ নয়, সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এখন তলানিতে।বিভিন্ন সূত্রের তথ্য বলছে, খুলনা সদরে গ্রেনেড বাবু ও আরেকটি অংশ ফুলতলা, আড়ংঘাটা, দৌলতপুরে মুন্না গ্রুপ বর্তমানে সবচেয়ে বেশি অপরাধে জড়িত। একই সাথে রয়েছে পলাশ গ্রুপ, হুমা বাহিনী, আরমান গ্রুপ, নুর আজিম গ্রুপ এবং আশিক গ্রুপ।সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এই গ্রুপগুলোর প্রধান আয়ের উৎস মাদক ব্যবসা। খুলনায় প্রতি মাসে অন্তত ১০০ কোটি টাকার মাদকের কেনাবেচা হয়। এই টাকার ভাগাভাগি এবং এলাকা দখল নিয়ে গত এক বছরেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০ জন।আরও পড়ুন: মাদক ও আধিপত্যের জেরে খুলনায় আদালত চত্বরে জোড়া খুন: র‌্যাবআইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে গত ২৯ মার্চ পলাশ গ্রুপের প্রধানসহ ১১ জন ধরা পড়ায় এই গ্রুপটি বর্তমানে কিছুটা কোণঠাসা। এছাড়া আরমান ও নূর আজিম কারাগারে এবং আশিক বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে। তবে সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে আসা হুমা বাহিনী মুন্না গ্রুপের সাথে আধিপত্যের লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়ায় অস্থিরতা আরও বেড়েছে।আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই নাজুক অবস্থা নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানিয়া সুলতানা বলেন, 'অপরাধীরা অপরাধ করে যে গতিতে পালাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তার চেয়ে বেশি চৌকস হতে হবে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে দ্রুত অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতার নিশ্চিত করা জরুরি।'আরও পড়ুন: খুলনায় যুবককে গুলি করে হত্যা করল দুর্বৃত্তরাঅন্যদিকে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কথা স্বীকার করলেও পুলিশ বলছে তারা বসে নেই। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান বলেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত ৯ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ মোট ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'আমরা সন্ত্রাসীদের ধরছি, কিন্তু তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও একই অপরাধে জড়াচ্ছে। তবে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স।'