রুশ সেনাদের হটিয়ে ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর কুপিয়ানস্কের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দাবি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। বেশ কয়েকদিন ধরে শহরটি দখলের দাবি করে আসছিল রাশিয়া। তবে শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ইউক্রেনীয় বাহিনী জানায়, তারা কুপিয়ানস্ক শহরের প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। খবর আল জাজিরার।উত্তর খারকিভ অঞ্চলে যুদ্ধরত ইউক্রেনীয় বাহিনী জানিয়েছে, গত ১২ ডিসেম্বর তারা কুপিয়ানস্কে রাশিয়ার রসদ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে এর ভেতরে ২০০ জন রুশ সেনার একটি অগ্রগামী দলকে ঘিরে ফেলে এবং শহরের উত্তরের বনাঞ্চল থেকে রুশ বাহিনীকে তাড়িয়ে দেয়। প্রতিবেদন মতে, আকাশ থেকে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজেও দেখা গেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী পরদিন কুপিয়ানস্ক শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং দক্ষিণ শহরতলির ইউভিলেনি পুনরুদ্ধার করছে, রুশ সেনাদের উত্তর ও পশ্চিম শহরতলিতে ঠেলে দিচ্ছে। গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) নাগাদ কুপিয়ানস্কে রাশিয়ার অবস্থান আরও নাজুক হয়ে পড়ে। ইউক্রেনীয় বাহিনী জানায়, তারা গ্যাস পাইপলাইনের মধ্যদিয়ে শহরে শক্তিবৃদ্ধির চেষ্টা আটকে দেয়। এই কৌশল রাশিয়া চাসিভ ইয়ার অবরোধের সময় ব্যবহার করেছিল এবং বিচ্ছিন্ন রুশ সেনাদের কেবল ড্রোনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছিল। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানায়, তাদের সেনারা রাশিয়ার অব্যাহত আক্রমণ প্রতিহত করছে। তবে রাশিয়া কুপিয়ানস্ক শহর নিয়ে ইউক্রেনের এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে যে, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আরও পড়ুন: ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৭ গত সোমবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাপাদ গ্রুপ অফ ফোর্সেসের ইউনিটগুলো মুক্ত কুপিয়ানস্কের সমস্ত জেলার ওপর নির্ভরযোগ্য নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। দাবি করা হয়, দক্ষিণ দিক থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর শহরে প্রবেশের চেষ্টা মোকাবিলা করা হচ্ছে। তবে এক রুশ সামরিক প্রতিবেদক টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে লেখেন, ‘একটা বিষয় নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, কুপিয়ানস্কের কেন্দ্র ও উত্তরের কিছু অংশ এখনও রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী দখলে রেখেছে। তবে এর বেশিরভাগ অংশ ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।’ এরপর গত বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ কর্নেল জেনারেল ওলেক্সান্ডার সিরস্কি ইউক্রেনের মিত্রদের জানান যে, তার বাহিনী কুপিয়ানস্কের ৯০ শতাংশ পুনরুদ্ধার করেছে। একই সময়ে মস্কোতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেন যে, ‘শত্রুরা শহরটি পুনরুদ্ধারের ব্যর্থ চেষ্টা করছে’। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর প্রথমদিকেই কুপিয়ানস্ক শহরটি মস্কোর দখলে চলে যায়। কিন্তু কয়েক মাস পরে সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনীয় বাহিনী রেলপথের এই কেন্দ্রটি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সম্প্রতি ইউক্রেন ধীরে ধীরে কুপিয়ানস্ক থেকে আস্তে আস্তে সেনা সরিয়ে নিচ্ছিল। এই সুযোগেই রুশ সেনাবাহিনী শহর দখলে হামলা জোরদার করে। আরও পড়ুন: রাশিয়ার স্বার্থকে সম্মান করলেই কেবল ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হবে: পুতিন গত অক্টোবর মাসের শেষ দিকে পোকরোভস্ক ও কুপিয়ানস্ক শহর ঘিরে ফেলার দাবি করে রাশিয়া। এর প্রায় এক মাস পর পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভের এক গুরুত্বপূর্ণ শহটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করে মস্কো। গত ২০ নভেম্বর রুশ সেনা কমান্ডার সের্গেই কুজোভলেভ এক ঘোষণায় বলেন, রুশ বাহিনী ‘কুপিয়ানস্ক শহর মুক্ত করার কাজ সম্পন্ন করেছে’। এ সময় শহরটিকে ‘ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে শহরটি পরিদর্শনের যাওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। তবে এক মাসের মধ্যে ইউক্রেনীয় বাহিনী শহরটি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। পোকরোভস্ক শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও লড়াই অব্যাহত রয়েছে।