ভাটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জে ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে আধুনিক ভবন ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি। তবে দেড় বছর আগে ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও এখনো শুরু হয়নি শিক্ষা কার্যক্রম। এতে নষ্ট হচ্ছে ভবনটির অবকাঠামো, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যন্ত্রপাতি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে সাড়ে তিন একর জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে ৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাদা ধবধবেই দৃষ্টিনন্দন ভবনগুলো। আধুনিক নকশায় নির্মিত এই ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি ভবনগুলোর কাজ শেষ হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন। দৃষ্টিনন্দন প্রতিষ্ঠানটিতে একটি একাডেমিক ভবন, একটি ছাত্র হোস্টেল ও একটি ছাত্রী হোস্টেল রয়েছে। এছাড়া শিক্ষক ও স্টাফদের জন্য আলাদা আলাদা কোয়ার্টার আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষসহ ৫০ জনের জনবল শুরুতেই প্রয়োজন হলেও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সুনামগঞ্জ আইএইচটির জনবল না দেওয়ায় বিশাল এ অবকাঠামো কোনো কাজে আসছে না এই অঞ্চলের মানুষদের। ফলে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ভবনগুলো এখন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘বোঝা’ হয়ে আছে। এছাড়া আইএইচটির প্রতিটি ক্যাম্পাসে নার্সিং, মেডিকেল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি, রেডিওলজি এবং ফিজিওথেরাপির মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা শিক্ষার্থীদের শেখানো এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। তবে স্থানীয়রা জানায়, এই প্রতিষ্ঠানটি চালু হলে হাওর পারের শিক্ষার্থীরা মেডিকেল ও স্বাস্থ্যখাতে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেতো। পাশাপাশি এখানে ডিপ্লোমা পর্যায়ের হেলথ টেকনোলজিস্ট তৈরি হতো, যা সুনামগঞ্জসহ পুরো হাওর অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবায় বড় অবদান রাখতো। স্থানীয় বাসিন্দা সেজলু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনগুলো কোনো কাজে আসছে না। আমার মনে হয় এটি চালু করা সম্ভব হলে এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যখাতে অনেক পরিবর্তন আসতো। স্থানীয় বাসিন্দা আফাজ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির কাজ যখন শুরু হয় তখন আমরা অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম, এটি চালু হলে এই অঞ্চলের শিক্ষাখাত বদলে যাবে পাশাপাশি অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। হাওর পাড়ের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এটি চালু হলে আমরা যারা শিক্ষার্থী ছিলাম তারা হয়ত এই প্রতিষ্ঠানে অনেক ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই অঞ্চলের স্বাস্থ্য খাতে বিরাট অবদান রাখতে পারতাম। সুনামগঞ্জ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ-আল-ফিরোজ জাগো নিউজকে বলেন, আইএইচটির এই প্রতিষ্ঠানটি হস্তান্তরের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। তবে তারা এখনো এই প্রতিষ্ঠানটি হস্তান্তর করেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটি পরিত্যাক্ত পড়ে থাকায় অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, এই প্রতিষ্ঠান চালু হলে সারাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে এসে পড়াশুনা করবে এবং হাওরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবাও বদলে যাবে। মূলত ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি মেসার্স বিডিএল অ্যান্ড এমটি (জেবি) নামে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি নির্মাণ করে। যা শেষ হওয়ার পর হাওরাঞ্চলে শিক্ষায় আশার আলো হয়ে ওঠার কথা থাকলেও আজও অধারাই রয়ে গেছে। এফএ/এএসএম