খালে পড়ে থাকা ভাঙা সেতুতে ডুবছে ১০ গ্রামের মানুষের স্বপ্ন

মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলায় পদ্মা নদীর শাখা খালে একটি সেতুর অভাবে ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্তত দশ গ্রামের মানুষ। খালটির ওপর একটি সেতু নির্মাণ হলেও ত্রুটির কারণে সেটি উদ্বোধনের আগেই ধসে পড়ে। ফলে দুর্ভাগ্য আর বদলায়নি দুর্ভোগে থাকা মানুষের। উপজেলার হারুকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদপুর এলাকার খালটিতে নির্মিত সেতুটি ভেঙে খালের পানিতে ডুবে রয়েছে। ফলে প্রতিদিন স্কুলগামী শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমজীবী মানুষসহ সাধারণ জনগণকে প্রায় এক কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে গ্রামীণ রাস্তায় কমবেশি ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু/কালভার্ট কর্মসূচির প্রকল্পের আওতায় ৬০ ফুট দীর্ঘ এবং ২৪ ফুট উঁচু এই পাকা সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ওই সময় এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫০ টাকা। আর এই সেতুটি নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি ভেঙে পড়ার পর একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও আজ পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া নৌকায় খাল পার হতে হয় মানুষকে। দানিসতোপুর গ্রামের মো. ইমান আলী জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে ব্রিজটি এখানে হয়। সেই ব্রিজটি নতুন অবস্থাতেই নিচের দিকে ডুবে যায়। ব্রিজটা যেভাবে হওয়ার কথা, পরিপূর্ণভাবে হয়েছিল না। আমাদের দেশের ঠিকাদারদের কাজ ফাঁকিবাজির কাজ। এই জায়গায় ভালো একটা ব্রিজ প্রয়োজন। ব্রিজের ওই পাড়ের মানুষ অনেক ফসল উৎপন্ন করে। সেই ফসল বাজারে আনতে তাদের অনেক কষ্ট হয়ে যায়। দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের এক বাসিন্দা অটোরিকশা চালক ছানি মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ব্রিজটি পদ্মা নদীর পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। এখন আমাদের আধা কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। কাদার কারণে গাড়িও নষ্ট হয়ে যায়। চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মধুম আলী জাগো নিউজকে বলেন, পারাপারে আমাদের খুব কষ্ট হয়। পারাপার হতে খেয়া নৌকায় পাঁচ টাকা করে মোট দশ টাকা দিতে হয়। জমিতে যখন সার দিয়েছি, তখন আমাদের আরও কষ্ট হয়েছে। প্রথমে গাড়ি থেকে মাথায় করে নিয়ে নৌকায় তুলতে হয়েছে, তারপর পার হতে হয়েছে। এই ব্রিজটি থাকলে আমাদের অনেক সুবিধা হতো। দক্ষিণ চাঁদপুরের বাসিন্দা আজাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সেতু না থাকায় আমাদের প্রতিদিনের কাজকর্মে অনেক সমস্যা হচ্ছে। অসুস্থ রোগী কিংবা প্রসূতিদের নিয়ে চলাচল করা খুবই কষ্টকর। আমাদের আশপাশে প্রায় দশ গ্রামের মানুষের দাবি, এখানে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণ করা হোক। মানিকগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ব্রিজটির টেন্ডার হয়। টেন্ডার হওয়ার পরও প্রায় তিন বছর লেগে যায় সেটি নির্মাণ করতে। কিন্তু উদ্বোধনের আগেই টেকনিক্যাল কারণে এটি ভেঙে যায়। তবে ব্রিজটি সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরও ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হয়নি। এ কারণে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি চলমান রয়েছে। ওই খালটির দৈর্ঘ্য অনেক বেশি। এ কারণে আমরা ওইখানে আর ব্রিজ নির্মাণ করতে পারবো না। শুনেছি এলজিইডি সেখানে সয়েল টেস্ট করেছে। সম্ভবত একটা প্রকল্প দেবে। মো. সজল আলী/এফএ/জেআইএম