বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সদ্য জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেয়া মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন বলেছেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে কথায় জামায়াতে ইসলামী কষ্ট পায়, সেই কথা আমি বলব না। প্রয়োজনে আমার জবান কেটে দেব। কারণ তারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। আমি তাদের ভালো-মন্দের সাথেই থাকব। জামায়াত তাদের রাজনীতি করবে, এগিয়ে যাবে।শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা কলেজ মাঠে আয়োজিত এক কৈফিয়ত সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। যদি তারা আমাকে আশ্রয় না দিত, তাহলে হয়তো আমাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে হতো। এই বয়সে নতুন করে ঘর বা দল গড়ার সামর্থ্য আমার নেই। আমার ঘরে চাল নেই, চুলা নেই, আমি কীভাবে নতুন ঘর বানাব। এই বয়সে কেউ আমাকে আশ্রয় দেবে না। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই কৃতজ্ঞতা আজীবন থাকবে।’ নিজের রাজনৈতিক অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজ হঠাৎ করে দেখছি আমার দাম বেড়ে গেছে। বিএনপির অনেক বন্ধু ফেসবুকে আমাকে নিয়ে লেখালেখি করছে। এতে আমি শুকরিয়া জানাই। তারা এখন বুঝতে পারছে আমি তাদের ঘরের একটি মোটা খুঁটি ছিলাম। আমি নিজে দল ছেড়ে আসিনি, আপনারাই আমাকে বের করে দিয়েছেন। গত তিন বছর আমার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেননি, এমনকি বিয়ের দাওয়াতও দেননি। আজ আমাকে গালাগালি করছেন, এতেও ভালো লাগে, কারণ বুঝি আপনারা আমাকে নিয়ে ভাবছেন।’আরও পড়ুন: ইসির কাছে নিরাপত্তা চাইলেন ২ প্রার্থীসভায় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সবাই মিলেমিশে বসবাস করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবো না। জামায়াত যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে নিশ্চয়ই তারা আমাকে কোনো ভালো জায়গায় রাখবে।’ জামায়াতের কাছে তিনটি আবদার তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি চাই দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজিমুক্ত, সন্ত্রাস ও দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ। আমরা আর চাঁদা দিতে চাই না, রাস্তাঘাটে নিরাপদে চলতে চাই। দ্বিতীয়ত, সত্য প্রকাশ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা চাই, বিশৃঙ্খলা নয়। শান্তির মাধ্যমেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা হোক। তৃতীয়ত, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মর্যাদা চাই, মানুষ মানুষকে সম্মান করবে।’এসময় তিনি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যার বিচার চেয়ে বলেন, ‘আমরা একজন ত্যাগী হাদিকে হারিয়েছি। আমরা এই হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। যারা এই হত্যার সাথে জড়িত প্রয়োজনে পাতাল থেকে তুলে নেতাদের বিচার করতে হবে। আমরা শুধু বিচারই চাই না শরিফ ওসমান হাদির রেখে যাওয়া কাজ বাস্তবায়ন করতে চাই।’ এ সময় কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী–পাকুন্দিয়া) আসনের জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়ল, উপজেলা আমির অধ্যাপক মোজাম্মেল হক জোয়ারদার, সেক্রেটারি মাওলানা মাহমুদুল হাসানসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।আরও পড়ুন: বিএনপি প্রার্থী ফজলুর রহমানকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিগমার চ্যালেঞ্জসভায় মেজর রঞ্জনের ভক্ত-সমর্থকসহ স্থানীয় হাজারো মানুষ অংশ নেন। সভা শেষে শরিফ ওসমান হাদির রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপির সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন।