চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ৩৭টি ভুক্তভোগী পরিবারের মাঝে মোট ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান করা হয়। তবে অনুদান গ্রহণকালে স্বজনহারা পরিবারগুলো এই মহাসড়ককে অভিশাপমুক্ত করতে দ্রুত ৬ লেনে উন্নীত করার জোর দাবি জানিয়েছেন।বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৫ জন এবং আহত ১৭ জনের পরিবারকে এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা এবং আহতদের আঘাতের ধরন অনুযায়ী ১ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রদান করা হয়। সুবিধাভোগীদের মধ্যে পথচারী, যাত্রী, চালক ও হেলপারদের পরিবার রয়েছে।সকাল ৯টায় ৪ বছরের সন্তান ফায়াজ আব্দুল্লাহকে নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আসেন মো. আমিনুল হক। গত ৫ নভেম্বর চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী এলাকায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তিনি তার মা, বোন ও স্ত্রীসহ পরিবারের ৬ সদস্যকে হারান। তিনি অভিযোগ করেন, 'সড়কের পাশে লবণাক্ত কাদামাটি ফেলার কারণে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। সড়কের অব্যবস্থাপনাই আমার পরিবারকে কেড়ে নিয়েছে। আমরা শুধু টাকা চাই না, আমরা চাই এই মহাসড়কটি দ্রুত ঠিক করা হোক।'বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্র সাগরের পিতা মো. জোবাইদুর রহমান এবং আরেক সন্তানহারা পিতা সালাহ উদ্দিনও একই দাবি জানান। তারা বলেন, পর্যটন নগরীর এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এখন ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। দ্রুত ৬ লেনে উন্নীত না করলে লাশের মিছিল আরও দীর্ঘ হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় পিতাকে হারানো নাজির হোসেন দুর্ঘটনার জন্য চালকদের বেপরোয়া গতি ও অসুস্থ প্রতিযোগিতাকে দায়ী করেন।আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যেন ‘মৃত্যুর করিডোর’, ১০ মাসে ১৫০ প্রাণহানিবিআরটিএর তথ্যমতে, গত ১১ মাসে শুধু কক্সবাজার অংশেই ৮৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮৯ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ২৫৫ জন। সরু রাস্তা, অতিরিক্ত যানবাহন এবং অদক্ষ চালকদের কারণেই এই হতাহতের ঘটনা ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, 'স্বজন হারানোর ক্ষতি টাকা দিয়ে পূরণ সম্ভব নয়। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের মানবিক দায়িত্ব। এই অর্থ তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে কিছুটা হলেও সহায়তা করবে।'অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিআরটিএ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক মো. মাসুদ আলম, সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমরান হোসেন সজীব। এতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।