সুদানের আবেই শহরে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী জাহাঙ্গীর আলমের (৩০) মরদেহ রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে কিশোরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছবে। সামরিক হেলিকপ্টারে করে তার মরদেহ আনা হবে।রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে পাকুন্দিয়া উপজেলা সদরে পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জাহাঙ্গীর আলমকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি অবতরণ করবে। তারপর সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তার গ্রামের বাড়ি একই উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামে।জোহরের নামাজের পর বাড়ির সামনে ফসলের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে জানাজার নামাজ। পরে তাকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুপম দাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরইমধ্যে নেয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি।এর আগে, রোববার সকালে ঢাকার সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ জাহাঙ্গীর আলমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।এদিকে, শহীদের মরদেহ ফেরার অপেক্ষায় তারাকান্দি গ্রামের বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের স্তব্ধতা। তিন বছরের ছোট্ট ছেলে ইরফান, আদরের স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার এবং বৃদ্ধ মা পালিমা বেগম এবং বাবা হযরত আলী প্রতিটি মুহূর্তে অপেক্ষা করছেন— কখন আসবে তাদের জাহাঙ্গীর।স্থানীয়রা জানান, বাবার আদর কী, তা বোঝার আগেই চিরতরে পিতৃহারা হলো তিন বছরের ছোট্ট ইরফান। বাড়ির উঠোনজুড়ে শুধু কান্না আর হাহাকার। গ্রামের মানুষ বারবার ছুটে আসছেন শহীদের বাড়িতে।কেউ জানতে চাইছেন মরদেহ কখন পৌঁছাবে, কেউ টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে খবর নিচ্ছেন। অনেক সহপাঠী ও পরিচিতজন অপেক্ষায় আছেন জানাজায় অংশ নিতে— শেষবারের মতো দেখতে চান তাদের প্রিয় সহপাঠী জাহাঙ্গীর আলমকে।আরও পড়ুন: শান্তিরক্ষী মিশনে শহীদ ৬ বাংলাদেশি সেনার জানাজা সম্পন্নজাহাঙ্গীর আলম কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের আকন্দ বাড়ির হযরত আলীর ছেলে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেসওয়েটার পদে কর্মরত ছিলেন। তার ব্যক্তিগত নম্বর (সিএস-২২০১০৯)। প্রায় ১১ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সংঘটিত সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ জন শান্তিরক্ষী শাহাদাৎ বরণ করেন।পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন মেঝো। তার বড় ভাই মো. মোস্তফা প্রবাসী এবং ছোট ভাই মো. শাহিন মিয়া কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। স্ত্রী ও তিন বছর বয়সী একমাত্র সন্তানকে রেখে গত ৭ নভেম্বর শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের জন্য সুদানে যান তিনি।পরিবারের সদস্যরা জানান, সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার আশাতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশের মাটিতে শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। শান্তির জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই তিনি যুক্ত হলেন শহীদদের কাতারে।প্রসঙ্গত, ওই হামলায় ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হওয়ার পাশাপাশি আরও নয়জন আহত হন। আহতদের মধ্যে আটজন কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থিত আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে (লেভেল–৩) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমানে তারা সবাই শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।