নিরাপত্তা জনিত কারণে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে অপারগতা জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদ।রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক ফেসবুক পোস্টে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পক্ষে যারা নমনীয়তা উৎপাদন করবে, আমরা তাদেরকে জুতা খুলে মুখে মারব ইনশাল্লাহ। রাবিতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যদি চাকরি করে, তাদেরকে রোববার থেকে কলার ধরে টেনে টেনে প্রশাসনিক ভবনের সামনে বেঁধে রাখব।’ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার এ ঘোষণা দেন। এ বক্তব্যের জেরে নিজের ফেসবুক আইডিতে ওই শিক্ষক লেখেন, ‘নিরাপত্তা না থাকায় ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া ও অন্যান্য অ্যাকডেমিক কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দুঃখিত। আমার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব রয়েছে আমার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া এবং প্রয়োজনে আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে ৮০০ শিক্ষকের প্রতি ক্লাসরুমে প্রবেশ করলে তাদেরকে কলার ধরে টেনে প্রশাসন ভবনের সামনে এনে বেঁধে রাখার অব্যাহত হুমকি দেয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই সকল শিক্ষকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’ আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রাবির ৬ ডিনের পদত্যাগ তিনি আরও লেখেন, ‘যেই মুহূর্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেই মুহূর্ত থেকেই আমার ওপরে ন্যস্ত দায়িত্ব আমি যথাযথভাবে পালন করবো ইনশাল্লাহ।’ এ বিষয়ে রোববার বিকেলে কাজী জাহিদ বলেন, এভাবে জেনারেল নোটিশের মতো সংখ্যা উল্লেখ করে হুমকি দেয়ার পর কোনোভাবেই নিরাপদ অনুভব করছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি সাতশ’র অধিক সব শিক্ষক যদি ফ্যাসিস্ট হয়, তাহলে সেখানে তো আমারও নাম আছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সব শিক্ষকই তো রাজনীতি করে। বর্তমান প্রশাসনে থাকা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সেভাবেই আমাদেরও নাম আছে। আরও পড়ুন: আওয়ামীপন্থি ডিনদের পদত্যাগের বিষয়ে রাকসু জিএস আম্মারের আল্টিমেটাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, শিক্ষকরা যদি এভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে, তাহলে সমস্যা সৃষ্টি হবে। অনেক শিক্ষকই এভাবে নিরাপত্তা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেবো। এদিকে, রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় একটি গোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার পায়তারা চালাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী ও সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, কেউ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হলে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে সেই তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে। ঢালাওভাবে শিক্ষকদের নামের তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে মব করে তাদের অপদস্ত করা হচ্ছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে।