মারওয়া পাহাড়: যেখানে মা হাজেরার স্মৃতিরা কথা বলে

পবিত্র কাবা চত্বর থেকে সামান্য দূরেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ইসলামের ইতিহাসের এক জীবন্ত সাক্ষী ‘মারওয়া পাহাড়’। সাফা পাহাড় থেকে শুরু হওয়া ‘সাঈ’র আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত হয় এই মারওয়াতেই এসে। এটি কেবল পাথরের তৈরি কোনো সাধারণ পাহাড় নয়, বরং এটি মা হাজেরা (আ.)-এর মাতৃত্ব, ত্যাগ এবং মহান আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাসের এক মূর্ত প্রতীক।সরেজমিনে মারওয়া পাহাড়ে গেলে এখন চোখে পড়ে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। কাচঘেরা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক ব্যবস্থাপনার মধ্যেও পাহাড়ের মূল অংশটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। পাথুরে সেই পাহাড়ের ওপর বসে আছেন শত শত মানুষ। কারও হাতে পবিত্র কোরআন, কেউ বা তসবিহ পাঠে মগ্ন, আবার কেউ নফল নামাজ আদায় করছেন একমনে। তাদের চোখে-মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি, যা পার্থিব সব কোলাহলের ঊর্ধ্বে। ইসলামের ইতিহাস বলে, এই সেই স্থান যেখানে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সহধর্মিণী বিবি হাজেরা শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)-এর জন্য পানির খোঁজে ব্যাকুল হয়ে দৌড়েছিলেন। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী নির্জন উপত্যকায় তিনি সাতবার দৌড়াদৌড়ি করেন। সপ্তমবারের মতো এই মারওয়া পাহাড়ে এসেই তিনি থামেন এবং আল্লাহর রহমতে জমজম কূপের সন্ধান পান। আরও পড়ুন: সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত, উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ আল্লাহর প্রতি একজন মায়ের এই আকুতি এবং নির্ভরতা এতটাই পছন্দনীয় ছিল যে, মহান আল্লাহ এই ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছেন। পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সাফা ও মারওয়াকে তার ‘নিদর্শনসমূহ’-এর অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা করেছেন। কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব ওমরাহ ও হজপালনকারীর জন্য এই দুই পাহাড়ের মাঝে সাতবার সাঈ করা ওয়াজিব করে দেয়া হয়েছে। আজ পাথরের ওপর বসে থাকা এই মানুষগুলো যেন সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি করছেন। হাজার বছর আগের সেই উত্তপ্ত মরুময় পরিবেশ এখন নেই, কিন্তু মুমিনের হৃদয়ের আবেগ একই রকম। মারওয়া পাহাড় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আল্লাহর রাহে করা কোনো ত্যাগই বিফলে যায় না। চরম বিপদেও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখার শিক্ষা দেয় এই স্থান। যুগ যুগ ধরে এই মারওয়া পাহাড় মুমিনদের ঈমানি জাজবা আর চোখের পানির আমানতদার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে এলে মনে পড়ে যায়, এক নারীর ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ কীভাবে একটি জনপদকে আবাদ করে দিয়েছিলেন, যা আজ বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়ের স্পন্দন।