২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে স্বাধীন গণমাধ্যম, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক পরিসরে ধারাবাহিকভাবে হামলা গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গুরুতরভাবে সংকুচিত করছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সংগঠন। এসব ঘটনাকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে অভিহিত করেছে তারা। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে, ১৮ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সংগঠনগুলো বলছে, এসব হামলা ছিল পরিকল্পিত ও সমন্বিত, যা বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করেছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, হামলার সময় প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের ভবনের ভেতরে সাংবাদিক ও কর্মীরা আটকা পড়েছিলেন, যা তাদের জীবনের জন্য তাৎক্ষণিক ঝুঁকি সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দ্রুত ও কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়াকে গুরুতর ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে সংগঠনগুলো। আরও পড়ুন: প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার ৯১ লাখ ২৩ হাজার টাকা লুট করেন নাইম, কেনেন টিভি-ফ্রিজও একই সঙ্গে ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে দিপু চন্দ্র দাসকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এসব ঘটনা বাংলাদেশে আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়ার ভয়াবহ ইঙ্গিত দেয়। যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো আরও অভিযোগ করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও সহিংসতায় উসকানি এসব হামলাকে উৎসাহিত করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর দায়িত্বহীনতা এবং অনলাইনে ঘৃণা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের দুর্বল প্রতিক্রিয়াও তুলে ধরা হয়। বিবৃতিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, সাংবাদিক, গণমাধ্যম, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য অবিলম্বে কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার ও ছায়ানটসহ সব হামলার ঘটনার স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানানো হয়েছে এতে। যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে অ্যাকসেস নাউ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (আইটিজেপি), জার্নালিস্টস ফর ডেমোক্রেসি ইন শ্রীলঙ্কা (জেডিএস) এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট। জেপিআই/এসএনআর/এমএস