হজকে সামনে রেখে মসজিদুল হারামে চলছে বড় সংস্কার ও সম্প্রসারণ

​পবিত্র মক্কা নগরী এখন কর্মমুখর। একদিকে লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আকাশ-বাতাস, অন্যদিকে চলছে বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। ২০২৬ সালের হজকে কেন্দ্র করে মসজিদুল হারাম ও এর আশপাশের এলাকায় চলছে ব্যাপক সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ। সৌদি সরকারের ‘ভিশন ২০৩০’-এর অংশ হিসেবে এই উন্নয়ন কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হলো-- হাজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ইবাদতের পরিবেশকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় ও প্রযুক্তিনির্ভর করা।​‘সৌদি রিওয়াক’: স্থাপত্যের এক নতুন অধ্যায় হারাম শরিফের ইতিহাসে এবারের সম্প্রসারণের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো ‘সৌদি রিওয়াক’ (Saudi Riwaq) প্রকল্প। আব্বাসীয় আমলের স্থাপত্যরীতির সাথে আধুনিক প্রকৌশলবিদ্যার সংমিশ্রণে এটি তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে মাতাফ (তাওয়াফের স্থান) এবং এর আশপাশের চত্বরের ধারণক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ২০২৬ সালের হজের আগেই এই রিওয়াকের বড় অংশের কাজ পুরোপুরি শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে প্রতি ঘণ্টায় আরও লক্ষাধিক হাজি একসঙ্গে তাওয়াফ করতে পারবেন, যা ভিড় ব্যবস্থাপনায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। ​মাতাফ ও সাঈর স্থান প্রশস্তকরণ হজের সময় সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় তাওয়াফ এবং সাঈ করার স্থানে। এই সমস্যা সমাধানে মাতাফের পরিধি বাড়ানোর কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। নিচতলা, দোতলা এবং ছাদের অংশে নতুন করে মার্বেল পাথর বসানো, ভেন্টিলেশন সিস্টেম উন্নত করা এবং চলাচলের পথ প্রশস্ত করার কাজ চলছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য আলাদা এবং নিরাপদ ট্র্যাকগুলোকে আরও আধুনিক করা হচ্ছে, যাতে মূল ভিড়ের সাথে তাদের সংঘর্ষ না হয়। ​প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ২০২৬ সালের হজে প্রযুক্তির ব্যবহার হবে চোখে পড়ার মতো। সংস্কারকাজে স্মার্ট টেকনোলজিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে : ​স্মার্ট ফ্লোর : তীব্র গরমেও যাতে মেঝের তাপমাত্রা সহনীয় থাকে, সেজন্য বিশেষ ধরনের পাথর ও কুলিং সিস্টেম বসানো হচ্ছে। ​উন্নত সাউন্ড সিস্টেম : হারামের প্রতিটি কোণ থেকে যাতে আজান ও খুতবা স্পষ্টভাবে শোনা যায়, সেজন্য অত্যাধুনিক অডিও সিস্টেম ইনস্টল করা হচ্ছে। ​AI ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট : ভিড় নিয়ন্ত্রণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ক্যামেরা ও সেন্সর বসানোর অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে, যা হজের সময় রিয়েল-টাইম ডাটা প্রদান করবে। ​পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন কেবল হারাম শরিফের ভেতরেই নয়, বাইরের চত্বরেও চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। মক্কার প্রবেশদ্বারগুলোতে নতুন টানেল, রিং রোড এবং হারামীইন ট্রেন স্টেশনের সাথে হারামের সংযোগ পথগুলোকে আরও সুগম করা হচ্ছে। বাস টার্মিনালগুলো সরিয়ে আরও আধুনিক ও সুশৃঙ্খল করা হচ্ছে, যাতে হাজিরা নির্বিঘ্নে হারামে প্রবেশ করতে এবং বের হতে পারেন। লক্ষ্য হলো-- ২০২৬ সালে হাজিদের যাতায়াতের সময় অর্ধেকে নামিয়ে আনা। ​হাজিদের স্বাচ্ছন্দ্যই মূল লক্ষ্য সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আগামী বছরগুলোতে হজযাত্রীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়বে। সেই বাড়তি চাপ সামলাতে এবং আল্লাহর মেহমানদের সর্বোচ্চ সেবা দিতেই এই আগাম প্রস্তুতি। সংস্কার কাজের জন্য বর্তমানে কিছু কিছু অংশে চলাচলে সাময়িক বিধিনিষেধ থাকলেও, কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে ইবাদতে যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। আরও পড়ুন: ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট টাকা দিন-রাত বিরামহীন এই কর্মযজ্ঞের আওয়াজ জানান দিচ্ছে, ২০২৬ সালের হজ হবে এক নতুন অভিজ্ঞতার নাম। ধুলোবালি আর ক্রেনের এই যান্ত্রিক দৃশ্যপটের আড়ালে গড়ে উঠছে এক আধুনিক, নিরাপদ ও প্রশস্ত হারাম শরিফ। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা মুমিনরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের রবের ডাকে সাড়া দিতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই মক্কার এই ক্লান্তিহীন প্রস্তুতি।