গ্রিনল্যান্ডে বিশেষ দূত নিয়োগের ঘোষণা দেওয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করার কথা জানিয়েছে ডেনমার্ক। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের জন্য একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর এই প্রতিক্রিয়া জানায় কোপেনহেগেন। ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স ল্যোকে রাসমুসেন দেশটির টেলিভিশন চ্যানেল টিভি২–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এই নিয়োগ ও সংশ্লিষ্ট বক্তব্যে তিনি ‘ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ’। তিনি এটিকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলেও মন্তব্য করেন। রাসমুসেন জানান, বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা জানতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠাবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফেরার পর থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন। এ নিয়ে তিনি প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাও নাকচ করেননি। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তিনি লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জেফ ল্যান্ড্রিকে গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা জেফ ল্যান্ড্রি ভালোভাবেই বোঝেন এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ এগিয়ে নিতে কাজ করবেন। ট্রাম্পের ঘোষণার জবাবে জেফ ল্যান্ড্রি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার লক্ষ্যে এই স্বেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত।’ তবে জানুয়ারিতে করা একটি জনমত জরিপ অনুযায়ী, গ্রিনল্যান্ডের প্রায় ৫৭ হাজার বাসিন্দার বড় অংশ ডেনমার্কের কাছ থেকে স্বাধীনতা চাইলেও যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে চান না। ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড- উভয় পক্ষই বারবার বলেছে, বিশাল এই আর্কটিক দ্বীপটি বিক্রির জন্য নয় এবং এর ভবিষ্যৎ গ্রিনল্যান্ডের জনগণই নির্ধারণ করবে। এ বিষয়ে এএফপিকে ই-মেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে লার্স ল্যোকে রাসমুসেন বলেন, এই নিয়োগ গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত আগ্রহেরই প্রতিফলন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ সবাইকে ডেনমার্ক রাজ্যের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের মাঝামাঝি কৌশলগত অবস্থানে থাকা গ্রিনল্যান্ড বর্তমানে আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার বাড়তে থাকা আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নতুন নৌপথ উন্মুক্ত হওয়ায় এই আগ্রহ আরও বেড়েছে। একই সঙ্গে গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত পথের ওপরও পড়ে। এর আগে চলতি বছরের আগস্টে গ্রিনল্যান্ডে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর ডেনমার্ক যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকেও তলব করেছিল। সে সময় ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ অন্তত তিনজন মার্কিন কর্মকর্তাকে গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুকে দেখা যায়, যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পক্ষে ও বিপক্ষে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছিলেন। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালের জুন মাসে গ্রিনল্যান্ডে একটি কনস্যুলেট খুলেছিল। সূত্র: এএফপি এসএএইচ