ভারতের ছত্তিসগড় রাজ্যের কানকের জেলায় শেষকৃত্যকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পর একাধিক সহিংস ঘটনার ঘটেছে। একটি খ্রিষ্টান পরিবারের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, গির্জা ও প্রার্থনাকক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের ওপর পাথর নিক্ষেপে অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। কানকের বাদেতেভদা গ্রামে কয়েকদিন ধরে একটি খ্রিষ্টান পরিবারের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। বিরোধের মূল বিষয় ছিল এক খ্রিষ্টান ব্যক্তির বাবার শেষকৃত্য প্রক্রিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে এবং লাঠি হাতে একদল লোক বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। এসময় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতেই ধনুক-বাণ হাতে সশস্ত্র লোকজনকে প্রার্থনাকক্ষে তাণ্ডব চালাতে দেখা যায়। আরও পড়ুন>>ভারতে খ্রিষ্টানদের ক্যারল পার্টিতে হামলা, গ্রেফতার ৪ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের সশস্ত্র হামলায় পণ্ড খ্রিস্টানদের ইস্টারের অনুষ্ঠানভারতে ধর্মীয় সহিংসতা বন্ধে মোদী-মুর্মুকে চিঠি দিলেন খ্রিষ্টান নেতারা ঘটনার সূত্রপাত গত ১৫ ডিসেম্বর। বাদেতেভদা গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রধান রাজমান সালাম তার ৭০ বছর বয়সী অসুস্থ বাবা চামরা রাম সালামকে কানকের জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার বাবা মারা যান। রাজমান বহু বছর আগে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। Churches were vandalised, prayer hall torched, 20 police including an ASP were injured, a Christian man’s home was set on fire in Chhattisgarh by armed mobs. Why? Thread https://t.co/CdH9qfHr4d pic.twitter.com/XViEAere1e — Alishan Jafri (@alishan_jafri) December 21, 2025 রাজমান সালাম দ্য ওয়্যারকে জানান, প্রথমে তিনি স্থানীয় হিন্দু রীতিতে বাবার শেষকৃত্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খ্রিষ্টান হওয়ায় তাকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। এরপর ১৬ ডিসেম্বর পরিবারটি নিজেদের ব্যক্তিগত জমিতে খ্রিষ্টান রীতি অনুযায়ী শেষকৃত্যের সিদ্ধান্ত নেয়। রাজমানের ভাষ্য অনুযায়ী, শেষকৃত্যের সময় স্থানীয়রা আপত্তি জানালে প্রথমে কথাকাটাকাটি হয়। পরে আরএসএস ও বজরং দলের মতো হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো জড়িত হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে তা শারীরিক সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় রাজমানের পরিবার ও বন্ধুদের কয়েকজন আহত হন। রাজমানের অভিযোগ, পুলিশ তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা নেয়নি, বরং তার পরিবারকে চাপ দিয়ে পিছু হটতে বলে। আরও পড়ুন>>ভারতে বাংলাদেশি সন্দেহে শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যাভারতে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে সেনাসদস্য গ্রেফতারভারতে দলিত যুবককে বিয়ে করায় ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে পিটিয়ে হত্যা পুলিশের এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, কয়েকজন গ্রামবাসী চামরা রাম সালামের মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এবং দাবি তোলে, শেষকৃত্য আদিবাসী প্রথা অনুযায়ী হয়নি। তারা মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের দাবি জানায়। গ্রামবাসীদের অভিযোগের পর গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ওই দিনই মরদেহ তুলে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপরই গ্রামে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। রাজমান সালামের অভিযোগ, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মরদেহ সরিয়ে নেওয়া হয় এবং এরপর খ্রিষ্টানদের বাড়ি ও গির্জাগুলোতে হামলা চালানো হয়। কানকের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ শ্রিশিমাল জানান, ঘটনার পর একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এফআইআরে কী কী ধারা যুক্ত করা হয়েছে বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। রাজমান সালাম বলেন, প্রত্যেকেরই নিজের ধর্ম অনুযায়ী মৃতকে শেষকৃত্যের অধিকার থাকা উচিত। প্রয়োজনে স্থানীয় রীতিতে পুনরায় শেষকৃত্য করতে তারা রাজি, তবে পরিবারকে উপস্থিত থাকতে দিতে হবে। এদিকে ইউনাইটেড ক্রিশ্চিয়ান ফোরাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাদেতেভদার ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয়। ২০২৫ সালে ভারতজুড়ে শেষকৃত্য সংক্রান্ত অন্তত ২৩টি ঘটনায় খ্রিষ্টানদের ওপর হামলার তথ্য তারা নথিভুক্ত করেছে। এর মধ্যে ছত্তীসগড়েই ঘটেছে ১৯টি ঘটনা। সংগঠনটির দাবি, শেষকৃত্য নিয়ে বিরোধ ক্রমেই রাজনৈতিক রূপ নিচ্ছে এবং শোকাহত পরিবারগুলোকে সহিংসতার মুখে পড়তে হচ্ছে। সূত্র: দ্য ওয়্যারকেএএ/