মুসলিম পরিচয়ের কারণে বর্ণবাদের শিকার খাজার মেয়েরা, প্রতিবাদ স্ত্রীর

বন্ডাই বিচে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হামলার পর অস্ট্রেলিয়ান টেস্ট ক্রিকেটের অভিজ্ঞ তারকা উসমান খাজার মুসলিম পরিচয়ের কারণে তার দুই মেয়ে ঘৃণ্য ট্রোলিংয়ের শিকার হয়েছে—এ কথা জানিয়েছেন তার স্ত্রী র‍্যাচেল খাজা। সেই দিনের বিভীষিকার পর অস্ট্রেলিয়ায় ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব আরও তীব্র হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, হামলাকারী বাবা–ছেলে সাজিদ ও নাভিদ আকরামের সঙ্গে চরমপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোগসূত্র থাকতে পারে—এমন খবর প্রকাশের পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা প্রথম মুসলিম ক্রিকেটার উসমান খাজা। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারজুড়েই নিজের ইসলামি বিশ্বাস নিয়ে খোলাখুলি কথা বলে আসছেন তিনি। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে জন্মগ্রহণ করা এই বাঁহাতি পাঁচ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসেন। সিডনিতেই তার বেড়ে ওঠা এবং সেখানেই তিনি ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন।ইসলামোফোবিয়া নিয়ে তিনি আগেও প্রকাশ্যে কথা বলেছেন, বিশেষ করে মুসলিম ক্রীড়াবিদদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ এবং খেলাধুলায় আরও বেশি বোঝাপড়া ও অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।এবার সেই বিদ্বেষের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে তার পরিবার। খাজার স্ত্রী র‍্যাচেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন কিছু ভয়ংকর মন্তব্যের উদাহরণ শেয়ার করেছেন, যেগুলোর শিকার হয়েছে তাদের কন্যা আইশা ও আইলা।তিনি লিখেছেন, ‘গত এক সপ্তাহে আমরা যে মন্তব্যগুলো পেয়েছি, তার একটি ছোট নমুনা আমি সংগ্রহ করেছি। আমি যদি বলতে পারতাম এগুলো নতুন কিছু, তাহলে ভালো লাগত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা সবসময়ই এমন বার্তা পেয়ে এসেছি। তবে এবার এগুলো আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।’ আরও পড়ুন: বক্সিং ডে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার দলে একাধিক পরিবর্তন আসতে পারেকিছু জঘন্য মন্তব্যে তাদের মেয়েদের ‘ভবিষ্যতের স্কুল হামলাকারী’ বলা হয়েছে এবং দাবি করা হয়েছে যে তাদের ‘রক্তে ক্যান্সারগ্রস্ত সন্ত্রাসীদের রক্ত বইছে’। অনেকেই পরিবারটিকে পাকিস্তানে ‘ফিরে যেতে’ বলেছে।র‍্যাচেল বন্ডাই হামলা নিয়ে ওয়ান নেশন নেত্রী পলিন হ্যানসন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং লিবারেল এমপি অ্যান্ড্রু হ্যাস্টির মন্তব্যও শেয়ার করেন। পাশাপাশি তিনি অস্ট্রেলিয়ার জিউইশ কাউন্সিলের একটি বিবৃতিও যুক্ত করেন, যেখানে ঐক্য এবং ইহুদিবিদ্বেষ ও বর্ণবাদের অবসানের আহ্বান জানানো হয়।র‍্যাচেল লেখেন, ‘এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন আমাদের একসঙ্গে থাকা ও ঐক্যবদ্ধ হওয়া। ইহুদিবিদ্বেষ, ইসলামোফোবিয়া কিংবা বর্ণবাদ—কোনোটাকেই আমাদের মেনে নেওয়া উচিত নয়।’বন্ডাই'র হত্যাযজ্ঞের পর উসমান খাজাও ইনস্টাগ্রামে একাধিক প্রতিক্রিয়া জানান। রোববার (২১ ডিসেম্বর) তিনি তার প্রথম বিবৃতির একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘পুরো বন্ডাই ও ইহুদি সম্প্রদায়ের উদ্দেশে—দুই বছরে দুটি ভয়াবহ অপরাধ। আজ বন্ডাই থেকে সত্যিই হৃদয়বিদারক খবর এসেছে। সঙ্গে তিনি ভাঙা হৃদয়ের ইমোজি জুড়ে দেন।তিনি আরও লিখেছেন, ‘অর্থহীনভাবে প্রাণহানি, পরিবারগুলো ছিন্নভিন্ন, বন্ডাই কমিউনিটি আতঙ্কিত। কোনো ভাষা নেই—শুধু গভীর বেদনা। ক্ষতিগ্রস্ত সবার জন্য আমার শোক ও প্রার্থনা।’খাওয়াজা অস্ট্রেলিয়ার জিউইশ কাউন্সিলের একটি পোস্টও শেয়ার করেন। সেখানে বলা হয়, ‘আজ সন্ধ্যায় বন্ডাইতে চানুকাহ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংঘটিত গণগুলিবর্ষণের ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত ও মর্মাহত। এতে অন্তত ১০ জন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। আজ চানুকাহর প্রথম রাত, যখন আমরা প্রিয়জনদের সঙ্গে একত্র হয়ে চানুকিয়াহ জ্বালাই।আমাদের কমিউনিটির অনেকেই জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ খবর পেয়েছেন। কেউ আহত স্বজনদের সেবা করছেন, আবার কেউ এখনও অপেক্ষা করছেন তাদের পরিবার নিরাপদ কি না সেই খবরে।’সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ভোরে খাজা আবার তার ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে একটি নতুন আপডেটসহ বার্তাটি শেয়ার করেন। তিনি লিখেছেন, 'ভোরের আগে ঘুম থেকে উঠে পুরো ইহুদি ও বন্ডাই কমিউনিটির জন্য প্রার্থনা করছি। এই ঘৃণাজনিত অপরাধগুলোর কোনো স্থান নেই।’ আরও পড়ুন: শহীদ হাদির স্মরণে বিপিএলের শুরুতে এক মিনিট নীরবতাক্যারিয়ারজুড়ে খাজা মানবাধিকার ইস্যুতে একাধিক রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তার জুতায় ‘All lives are equal’ (সব জীবন সমান) এবং ‘Freedom is a human right’ (স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার)—এমন বার্তা লেখার চেষ্টা আলোচনায় আসে।আইসিসি জানায়, এসব বার্তা তাদের ব্যক্তিগত বার্তা সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গ করেছে এবং খাজাকে সেগুলো সরিয়ে ফেলতে বা ঢেকে রাখতে নির্দেশ দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, খেলার সরঞ্জামে রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা ব্যক্তিগত বার্তা প্রদর্শন নিষিদ্ধ।ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নিশ্চিত করে যে তারা এ বিষয়ে খাজার সঙ্গে কথা বলেছে এবং আইসিসির নিয়ম মেনে চলার বিষয়টি সমর্থন করেছে। একই সঙ্গে তারা জানায়, ম্যাচের বাইরে নিজের ব্যক্তিগত মত প্রকাশের অধিকারকে তারা সম্মান করে।