বাঁদুড় খাওয়ার পর একই পরিবারের ৬ জন হাসপাতালে, এই মাংস কি নিরাপদ?

যশোরের মণিরামপুরে বাদুরের মাংস খাওয়ার পর একই পরিবারের ৬ জন সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যদিও ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, বাঁদুড়ের মাংস খাওয়ার কারণে তারা অসুস্থ হননি।গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে বাঁদুড়ের মাংস খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে শুভাস দাসের স্ত্রী সখি দাস, তার ছেলে ইন্দ্রজিৎ দাস, প্রসেনজিৎ দাস ও হৃদয় দাস, দিলিপ দাসের ছেলে অজয় দাস এবং মৃত তারাপদ দাসের ছেলে রবিন দাস। অসুস্থ সখি দাস জানান, শনিবার দুপুরে তিনি বাপের বাড়ি থেকে প্রায় এক কেজি বাদুরের মাংস নিয়ে আসেন। পরে ওই মাংস রান্না করে রাতে পরিবারের সবাই ভাতের সঙ্গে খান। রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকালে পরিবারের কেউ ঘুম থেকে না ওঠায় প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। খোঁজ নিতে গিয়ে তারা দেখেন, পরিবারের সদস্যরা সবাই অসুস্থ অবস্থায় ঘরের ভেতরে পড়ে আছেন। প্রতিবেশীরা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ওইদিন বিকেলে তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন। আরও পড়ুন: যশোরের আলোচিত মহিলা লীগ নেত্রী মহুয়া গ্রেফতার সখি দাসের দাবি, তারা বাদুরের মাংস খেয়ে অসুস্থ হননি। তাদের খাবারের সঙ্গে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ক্ষতিকর দ্রব্য মিশিয়ে থাকতে পারে। কারণ, তাদের ঘর থেকে নগদ টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট হয়ে গেছে! বাঁদুড়ের মাংস খাওয়া কি নিরাপদ? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা (ডব্লিউএইচও), যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)সহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থার তথ্য মতে, বাঁদুড় বহু মারাত্মক ভাইরাসের প্রাকৃতিক বাহক। ফলে এর মাংস খাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।বাঁদুড়কে বলা হয় রিজার্ভয়ার হোস্ট, অর্থাৎ তারা নিজেরা অসুস্থ না হলেও বহু বিপজ্জনক ভাইরাস বহন করতে পারে। যেমন— রেবিস, নিপাহ ভাইরাস, ইবোলা, সার্স, কোভিড-১৯। এই ভাইরাসগুলো মানুষে সংক্রমিত হলে মৃত্যুঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।বাদুড়ের মাংস রান্না করলেও ঝুঁকি পুরোপুরি দূর হয় না। জবাই, চামড়া ছাড়ানো বা প্রস্তুতের সময়ই ভাইরাস শরীরে ঢুকতে পারে। রক্ত, লালা বা শরীরের তরলের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটে।ডব্লিউএইচও, সিডিসিসহ প্রায় সব সংস্থাই বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে বাঁদুড়ের মাংস খাওয়া থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকে। যশোর ৬ জন অসুস্থ হওয়ার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। তবে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আরএমও ডা. বজলুর রশিদ টুলু বলেন, বাঁদুড়ের মাংস খাওয়া অনিরাপদ। এটি নিপা ভাইরাস বহন করে। কেউ এই মাংস খেলে অসুস্থ হতে পারে। এই মাংস না খাওয়ার জন্য সবাইকে পরামর্শ দেন তিনি।