রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন ঢাকা-১২। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, কারওয়ান বাজার, হাতিরঝিল ও বিজয়নগর নিয়ে গঠিত এই আসনটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। চাঁদাবাজি, ফুটপাত দখল, ছিনতাই আর যত্রতত্র মাদকের আখড়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। গ্যাস সংকট, জলাবদ্ধতাসহ নানা নাগরিক সমস্যা তো আছেই। অভ্যুত্থান-পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে সমস্যা থেকে মুক্তির আশায় রয়েছেন ভোটাররা। প্রার্থীরাও দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।ঢাকা-১২ আসন এলাকায় সবচেয়ে বড় ভোগান্তির নাম তেজগাঁও ট্রাক স্টেশন। স্থানীয়দের ভাষায়, এটি যেন একটি টিউমার, যার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই যানজট ও পরিবেশ দূষণে নাকাল বাসিন্দারা। কারওয়ান বাজারে সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি বহুদিনের আলোচিত বিষয়। রেলগেট এলাকায় প্রকাশ্যে চলে মাদকের বেচাকেনা। বিজয় সরণি প্রান্তে রয়েছে ছিনতাই আতঙ্ক। অভিযোগ রয়েছে, প্রকাশ্যে অবৈধ কার্যক্রম চললেও নেই থামানোর উদ্যোগ। সমাধানে বহুবার জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের আশ্বাস পেলেও বাস্তবে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশ ভোটাররা। ঢাকা-১২ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা লম্বা হলেও আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির সাইফুল আলম নীরব, জামায়াতের সাইফুল আলম খান মিলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক ও এনসিপির নাহিদা সারোয়ার নিভা। আরও পড়ুন: নাগরিক সমস্যায় নিমজ্জিত ঢাকা-১১, ত্রাণকর্তা হবেন কে? নির্বাচিত হলে মাদক, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম কবর দেয়ার অঙ্গীকার করেন ধানের শীষের প্রার্থী। দাড়িপাল্লার প্রার্থীও বলছেন, বরদাস্ত করা হবে না অবৈধ কার্যক্রম। জামায়াতের সাইফুল আলম খান মিলন বলেন, ‘চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি, শুধু চাঁদাবাজ পরিবর্তন হয়েছে। আমরা দুর্নীতিকে লাল কার্ড দেখাতে চাচ্ছি।’ বিএনপির সাইফুল আলম নীরব বলেন, চাঁদাবাজ কিন্তু কোনো দলের না। তারা আলাদা দল। এ এলাকা গত ১৬ বছর চাঁদাবাজের রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। আমাকে আল্লাহ কবুল করলে এ এলাকায় চাঁদাবাজের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী সাইফুল হক বলেন, ‘অর্থলোভ সামলাতে পারলে চাঁদাবাজি, মাদক ও সন্ত্রাস থেকে মুক্তি সম্ভব। সংকট তৈরি করে অল্প কিছু মানুষ, কিন্তু ভুক্তভোগী হন হাজার হাজার বা লাখ মানুষ। ভালো উদ্যোগ নিলে প্রথমে কিছু বাধা আসবে, কিন্তু সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই সমস্যার সমাধান চাইবেন। আমি যদি বুঝি যে, আমি দায়িত্ব পালন করতে পারছি না, তবে আমি দায়িত্বে থাকবো না।’ আরও পড়ুন: ঢাকা-৫ আসনে ‘পাহাড়সম’ সমস্যা, প্রার্থীরা দিচ্ছেন ‘রূপান্তরের’ প্রতিশ্রুতি আর এনসিপি প্রার্থী নাহিদা সারোয়ার নিভা বলেন, ভোগের নয়, ত্যাগের রাজনীতিতেই আছে সমাধান। পুরনো রাজনীতির দুষ্টুচক্র আমি ভাঙব। আমি যেই রাজনীতিবিদ হতে চাই না, যিনি এসে মুখে মুখে অনেক কথা বলবেন, কিন্তু নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভোটাররা বিবেচনা করবেন যে, সব প্রার্থীই ভোট চাইছেন, কিন্তু কোন প্রার্থী কেমন। ঢাকা-১২ আসনে ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৩৩ হাজার ১১২ জন। এবার পরিবর্তনের আশায় তাকিয়ে তারা। সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা-১২ আসন, জবাবদিহিহীনতার সংস্কৃতি, দায়বদ্ধহীন রাজনীতি আর অর্থলিপ্সা সমস্যা সমাধানে বড় বাধা। তাই প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাসের বাইরে গিয়ে কে বাস্তবে এসব সমস্যা সমাধান করবেন, সেই দিকেই এখন তাকিয়ে এ আসনের ভোটাররা।