পদ্মাপাড়ে ইলিশ ভোজনের ঠিকানা

মো. রাহুল শেখ বাংলাদেশে ইলিশ শুধু একটি মাছ নয়; বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য ও স্বাদের অনন্য প্রতীক। ইলিশের স্বাদ যদি উপভোগ করতে হয় নদীর ধারে, খোলা আকাশের নিচে, পদ্মার হিমেল হাওয়ার সঙ্গে; তাহলে মাওয়া ফেরিঘাটের কথা না বললেই নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাওয়া ফেরিঘাট এখন শুধু যাতায়াতের স্থান নয় বরং এটি পরিণত হয়েছে ইলিশ খাওয়ার অনানুষ্ঠানিক মহোৎসবে। মিডটার্ম পরীক্ষা শেষ করে ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি ও আড্ডার মাঝে সময় অতিবাহিত হওয়ায় হলে ফেরার বাস মিস করি আমরা দুই বন্ধু। অবশেষে ক্যাম্পাস থেকে সাড়ে তিনটায় ছেড়ে যাওয়া মুন্সিগঞ্জগামী বাসে উঠে পড়ি আমরা। হঠাৎ করে বন্ধু হৃদয় ইলিশ খাওয়ার জন্য মাওয়া ফেরিঘাটের কথা তুললো। ওর ইলিশের প্রতি জন্ম নেওয়া লোভ এবং কথার ধরন দেখে আমিও না করতে পারলাম না। ভার্সিটির বাসে করেই ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে ধরে চলতে থাকলাম গন্তব্যের দিকে। ভার্সিটির বাসে এত জাঁকজমকপূর্ণ রাস্তায় দ্রুত গতিতে ছুটে চলা এবং বাইরের হাওয়ার মুখমণ্ডলে এসে ছোঁয়া লাগা; এগুলো যেন সেই প্রথম বর্ষের স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। যা-ই হোক, খুব আনন্দমুখর পরিবেশে আমরা মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর চৌরাস্তার মোড়ে এসে নেমে পড়লাম। তখন সূর্য পশ্চিম আকাশে প্রায় নিভু নিভু করছে। আমরা পায়ে হেঁটে রওয়ানা করলাম পদ্মা সেতু সংলগ্ন পদ্মাপাড়ে। ১০ মিনিট হেঁটে পদ্মাপাড়ে এসে মনটা যেন শীতল হয়ে উঠলো। বন্ধু হৃদয় শুরু করলো ঢাকার যানজট ও ধুলাবালিপূর্ণ পরিবেশের বাজে অভিজ্ঞতার কথা। সেইসাথে ঢাকা এবং পদ্মাপাড়ের পরিবেশ নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করতে করতে আমরা পদ্মাসেতুর কাছাকাছি এসে পৌঁছলাম। চারপাশে মানুষের ভিড়। কেউ পরিবার-পরিজন, কেউ বন্ধু-বান্ধব, আবার অনেকেই স্থানীয়; সবাই যেন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া সূর্যের মিলিয়ে যাওয়া দেখছে। অনেকেই নিজেদের মোবাইলে এ দৃশ্য ধারণ করছিলো। আমরাও নিজেদের গা ভাসিয়ে দিলাম বাকিদের সাথে। বেশ কিছু ছবি ধারণ করলাম। এভাবে একপর্যায়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা এ স্থান ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এবার জনপ্রতি ২০ টাকা করে অটোরিকশা ভাড়া করে পৌঁছে গেলাম নতুন ফেরিঘাট এরিয়ায়। মূলত ইলিশ ভোজনরসিকেরদের গন্তব্য থাকে এখানেই। এখানে ঢুকতেই গানের শব্দ ভেসে আসছিল। বুঝতে বাকি রইলো না, এখানে জাঁকজমকপূর্ণ মেলা চলছে। আমরা মেলার মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে ইলিশের দোকানে উঁকি দিচ্ছিলাম। ইলিশ ছাড়াও বিভিন্ন রকমের মাছ দেখলাম, যেগুলো ছিল বিচিত্র ধরনের। আরও পড়ুনপাহাড়-বনের সৌন্দর্য ‘গজনী অবকাশ কেন্দ্র’ শীতে ঘুরে আসুন পৃত্থিমপাশা জমিদারবাড়ি  অবশেষে নতুন ঘাটে ঘোরাঘুরি শেষ করে আমরা বাজার থেকে একটা ইলিশ নিয়ে দোকানদারকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে খাবারের অপেক্ষায় রইলাম। সরিষা তেলে শুকনা মরিচের সাথে ইলিশ ভাজা ভোজনের প্রতি আরও আগ্রহ সৃষ্টি করছিলো। অবশেষে আমাদের সামনে ভাত, সরষে ইলিশ, শুকনো মরিচ, ইলিশের লেজ ভর্তা এবং পেঁয়াজ ভর্তা নিয়ে কর্মচারী হাজির হলেন। আমরা খুব স্বাদমতো পেটপুরে খেয়ে নিলাম। খাওয়া শেষ করে হোটেল ম্যানেজারকে টাকা পরিশোধ করে হলে ফেরার দিকে জোর দিলাম। এবার ঘটলো আরেকটা মজার ঘটনা। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ফেরার জন্য গাড়ি ভাড়া হচ্ছিলো না। অবশেষে বন্ধু সবুর কাজীকে কল দেওয়া মাত্রই টাকা পাঠিয় দিলো। জনপ্রতি ১০০ টাকা করে সিএনজি ভাড়া করে রাত সাড়ে আটটার সময় হলের দিকে রওয়ানা করলাম। শীতের কাপড় না নেওয়ায় বেশ শীত শীত অনুভব করছিলাম। প্রায় ১ ঘণ্টা সময় ধরে সিএনজি চলতে চলতে আমরা সাড়ে নয়টার সময় হলে এসে পৌঁছলাম। সেই রাতে আমরা হল থেকে আর কোনো খাবার খেলাম না। মুখের মধ্যে লেগে থাকা ইলিশের স্বাদ ও পদ্মাপাড়ের পড়ন্ত বিকেলের মনোমুগ্ধকর পরিবেশের অভিজ্ঞতা মনের মধ্যে অন্যরকম আনন্দ দিচ্ছিলো। লেখক: কার্যনির্বাহী সদস্য, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ফিচার, কলাম অ্যান্ড কনটেন্ট রাইটার্স। এসইউ