ভারতকে বিধ্বস্ত করে ১৩ বছর পর অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জিতেছে পাকিস্তান। মাঠের দাপুটে পারফরম্যান্সের বাইরেও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে পাকিস্তান দলের প্রধান কোচ সরফরাজ আহমেদের ভারতীয়দের আচরণ নিয়ে তোলা অভিযোগ, যা দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন মাত্রা যোগ করছে।অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তান ১৯১ রানের বিশাল ব্যবধানে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে। এই জয়ের মাধ্যমে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ১৩ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাল এবং মহাদেশীয় ক্রিকেটে নিজেদের আধিপত্যের জোরালো বার্তা দিল।ফাইনালে ১১৩ বলে ১৭২ রানের ইনিংস খেলে সব আলো নিজের দিকে টেনে নেন পাকিস্তানের সামির মিনহাস। তার ইনিংসে ছিল ১৭টি চার ও ৯টি ছক্কা। এই ইনিংসে ভর করে পাকিস্তান নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৪৭ রান তোলে, যা টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।টুর্নামেন্টে অপরাজিত অবস্থায় ফাইনালে পা দেয়া ভারতীয় দলে ছিলেন আইপিএল মাতানো বৈভব সূর্যবংশী ও অধিনায়ক আয়ুশ মাত্রের মতো নাম, কিন্তু মাঠের খেলায় বড় রানের নিচে চাপা পড়ে যায় তারা। পাকিস্তানের পেস আক্রমণের সুইং আর নিখুঁত লাইনের বলের সামনে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং অর্ডার।আরও পড়ুন: শেষ দুই অ্যাশেজ খেলবেন না কামিন্সআলী রেজা ৪২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে আক্রমণের নেতৃত্ব দেন, আর মোহাম্মদ সাইয়াম ও আবদুল সুবহান নিয়ন্ত্রিত স্পেলে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ভারত মাত্র ২৬.২ ওভারে ১৫৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। ফলে ফাইনালটি একপেশে হয়ে ওঠে এবং পাকিস্তান তাদের দ্বিতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ শিরোপা নিশ্চিত করে।ম্যাচের পরবর্তী ঘটনাবলী মাঠের খেলাকেও ছাপিয়ে যায়। গণমাধ্যমের সামনে পাকিস্তানের কোচ সরফরাজ আহমেদ ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের আচরণের কড়া সমালোচনা করে একে ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন।সরফরাজ জানান, ম্যাচের আগে তিনি নিজের খেলোয়াড়দের স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেকোনো উসকানি সত্বেও তারা যেন সংযত আচরণ করে এবং উদযাপনেও শালীনতা বজায় রাখে। তার দাবি, প্রতিপক্ষের কিছু অশোভন আচরণ সত্ত্বেও পাকিস্তান প্রতিক্রিয়া দেখানোর বদলে ক্রীড়াসুলভ মানসিকতাকেই বেছে নিয়েছে।পাকিস্তান ডাগআউট থেকে ধারণ করা একটি ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে আবেগঘন কিন্তু শান্ত স্বরে সরফরাজকে খেলোয়াড়দের উদ্দেশে কথা বলতে দেখা যায়। পরে কোচ নিজেই নিশ্চিত করেন, সেখানে তিনি খেলোয়াড়দের মর্যাদা ও আত্মসম্মান বজায় রাখার বার্তা দিয়েছিলেন, শত্রুতা বাড়ানোর নয়।এই ভিডিও ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। সমর্থক ও সাবেক ক্রিকেটাররা তরুণ পর্যায়ে খেলোয়াড়দের আচরণ ও শৃঙ্খলার গুরুত্ব নিয়ে মত দেন। অনেকেই পাকিস্তানের সংযমের প্রশংসা করেন, আবার কেউ কেউ উভয় দলের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য আরও শক্ত মেন্টরশিপ ও জবাবদিহিতার আহ্বান জানান।আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে রাস্তায় হাঁটেন না রশিদ, চলেন বুলেটপ্রুফ গাড়িতেলজ্জাজনক হারের পর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) দল নিয়ে কেবল নিয়মিত মূল্যায়নের বাইরে গিয়ে একটি বিস্তারিত পর্যালোচনার পরিকল্পনা করছে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ হৃষিকেশ কানিটকার ও অধিনায়ক আয়ুশ মাত্রের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে, বিশেষ করে ২০২৬ সালের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিতব্য অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে।মাঠের আচরণ এই পর্যালোচনার অংশ হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ফলাফলই স্পষ্ট করে দেয়—আন্তর্জাতিক যুব পর্যায়ে শৃঙ্খলা, প্রস্তুতি এবং মানসিক দৃঢ়তার গুরুত্ব কতটা অপরিসীম।