২০২৫ সালে শোবিজ থেকে চিরতরে হারিয়ে গেলেন যারা

আনন্দ-বেদনা, আশা–নিরাশার ভেলায় চড়ে সবাই যখন ২০২৫ সালকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন পেছন ফিরে দেখলে বুকে শেল হয়ে বিঁধে হারানোর বেদনা। চলতি বছরে অনেক তারকাই আমাদের চিরদিনের মতো ছেড়ে গেছেন। সেই প্রয়াত শিল্পীদের স্মরণে জাগো নিউজের এই বিশেষ আয়োজন-   অঞ্জনা রহমানচলতি বছরের শুরুতেই বাংলা চলচ্চিত্রের খ্যাতিমান অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান মারা যান। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৪ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী অঞ্জনা নৃত্যশিল্পী থেকে নায়িকা হয়ে সর্বাধিক যৌথ প্রযোজনা এবং বিদেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশ ছাড়াও তিনি অভিনয় করেছেন ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায়। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, একাধিক জাতীয় স্বর্ণপদক ও বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন কয়েকবার। নৃত্যশিল্পী হিসেবেও অঞ্জনা পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক স্বীকৃতি। প্রবীর মিত্রঅভিনেত্রী অঞ্জনার শোক না কাটতেই খ্যাতিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্র ৮১ বছর বয়সে মারা যান। ৫ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। রুপালি পর্দার নবাবখ্যাত কিংবদন্তি এই অভিনেতা দীর্ঘ অভিনয় জীবনে অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকমহলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। গুলশান আরা আহমেদটেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ মারা যান চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর তিনি ইন্তেকাল করেন। এই অভিনেত্রী ‘হৃদয়ের কথা’, ‘ডাক্তার বাড়ি’, ‘ভালোবাসা আজকাল’, ‘লাল শাড়ি’সহ আরও বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি কাজল আরেফিন অমির জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এ কাবিলার (জিয়াউল পলাশ) মা ‘পলি চেয়ারম্যান’ চরিত্রে অভিনয় করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে পরিচিতি পান। এ ছাড়া মাছরাঙা টেলিভিশনের ধারাবাহিক ‘সিটি লাইফ’সহ অসংখ্য নাটক ও ধারাবাহিকে দেখা গেছে তাকে। আরও পড়ুনশাকিবের রাজ্যে উজ্জ্বল জাহিদ হাসান, সুবাস ছড়ালেন সাবিলা-তুষি২০২৫ সালের আলোচিত ৫ সিনেমা জীনাত রেহানাবাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কালজয়ী গান হিসেবে বিবেচিত ‘সাগরের তীর থেকে’ গানের কণ্ঠশিল্পী জীনাত রেহানা গত ২ জুলাই সকালে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের সংগীত জগতের এক উজ্জ্বল নাম ছিল জীনাত রেহানা। ১৯৬৫ সালে টেলিভিশনের শিল্পী হিসেবেও সংগীতজগতে যাত্রা শুরু করেন তিনি। যদিও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় কাজ করার কারণে তাকে নিয়মিত গানে পাওয়া যায়নি, তবুও তার গাওয়া বেশ কিছু গান আজও সমানভাবে জনপ্রিয়। এ কে রাতুলএকই মাসে সংগীতাঙ্গন হারায় আরেক প্রতিভাবান শিল্পীকে। ব্যান্ড ‘ওন্ড’-এর ভোকালিস্ট ও বেজিস্ট, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার এ কে রাতুল মারা যান ২৭ জুলাই। তিনি প্রয়াত চিত্রনায়ক জসীমের পুত্র হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। জাহানারা ভূঁইয়াচলচ্চিত্রে নারীকেন্দ্রিক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর ২৫ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। সত্তর ও আশির দশকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি জাহানারা ভূঁইয়া গীতিকার, নির্মাতা এবং প্রযোজক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। এ দেশে নারী চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম তিনি। ফরিদা পারভীনবছরের শেষভাগে এসে দেশের সংগীতাঙ্গন হারায় কিংবদন্তি লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনকে। তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন এই নন্দিত গায়িকা। বেশ কয়েকবার তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি চলে যান না-ফেরার দেশে। ১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া ফরিদা পারভীন গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। ক্যারিয়ারের শুরুতে দেশাত্মবোধক গান গাইলেও তার পরিচয় গড়ে ওঠে লালনকন্যা হিসেবে। তার কণ্ঠে ‘মিলন হবে কত দিনে’, ‘অচিন পাখি’ গানগুলো আজও বাঙালির চেতনার অংশ হয়ে আছে। লালনগীতিকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। এছাড়াও ১০ জুন মারা যান চিত্রনায়িকা তানিন সুবহা। ঢাকাই চলচ্চিত্রের খল অভিনেতা সাঙ্কু পাঞ্জা মৃত্যুবরণ করেন গত ২৯ মে।  দেশের বাইরে ভারতেও একঝাঁক তারকার মৃত্যু হয়েছে এই বছরে। তাদের মধ্যে আসামের গায়ক জুবিন গার্গের মৃত্যু গোটা ভারতজুড়ে শোক নামিয়েছিল। জনপ্রিয় ভারতীয় গায়ক জুবিন গার্গ ১৯ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন। সিঙ্গাপুরে ভয়াবহ এক স্কুবা ডাইভিং দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এই গায়কের। তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। ভারতীয় চলচ্চিত্রের বর্ষীয়ান অভিনেতা ও পরিচালক মনোজ কুমার ৪ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। দেশাত্মবোধক চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ‘ভারত কুমার’ নামে বিশেষ পরিচিত ছিলেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের পরিচিত মুখ মুকুল দেব মারা যান ২৩ মে। হিন্দি ও পাঞ্জাবি চলচ্চিত্রের পাশাপাশি টেলিভিশন নাটক ও ওয়েব কনটেন্টেও তিনি নিয়মিত কাজ করেছেন। মিউজিক ভিডিও ও টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শেফালি জারিওয়ালা ২৭ জুন মৃত্যুবরণ করেন। ‘কাঁটা লাগা’ মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে তিনি দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে রিয়েলিটি শো ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দর্শকদের মাঝে সক্রিয় ছিলেন তিনি। চরিত্রাভিনেতা হিসেবে পরিচিত অচ্যুত পোতদার মারা যান ১৮ আগস্ট। হিন্দি ও মারাঠি চলচ্চিত্রে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি দর্শকদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ তার অভিনয় বিশেষভাবে আলোচিত হয়। আইকনিক কমেডিয়ান ও অভিনেতা গোবর্ধন আসরানি ২০ অক্টোবর মুম্বাইয়ে স্বাস্থ্যের জটিলতার কারণে মারা যান। তার হাস্যরসাত্মক চরিত্রগুলোর জন্য তিনি বহু প্রজন্মের মাঝে জনপ্রিয় ছিলেন। এছাড়াও ভারতীয় টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা সতীশ শাহ ২৫ অক্টোবর কিডনি ফেইলিয়ারের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ‘সারাভাই ভস সারাভাই’সহ বহু সফল কাজের মাধ্যমে তিনি দর্শকদের মনে আনন্দ ছড়িয়ে দিয়েছেন। ভারতীয় গায়িকা ও অভিনেত্রী সুলক্ষণা প-িত ৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ের নানাভাতি হাসপাতালে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে ইন্তেকাল করেন। ১৯৭০-৮০ দশকের তার কণ্ঠ ও উপস্থিতি বহু হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। বর্ষীয়ান অভিনেতা পঙ্কজ ধীর ১৫ অক্টোবর ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর প্রয়াত হন। তিনি ‘মহাভারত’ সিরিজে কর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বিশেষভাবে সমাদৃত ছিলেন। সাংবাদিক, কবি, লেখক ও প্রযোজক হিসেবে পরিচিত প্রীতিশ নন্দী ৮ জানুয়ারি হৃৎযন্ত্রের ক্রমাগত সমস্যার কারণে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ভারতের গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দীর্ঘ সময় অবদান রেখেছিলেন। ৭ নভেম্বর ৮১ বছর বয়সে প্রয়াত হন অভিনেত্রী ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার জেরিন খান। যদিও তিনি স্বল্প সময় বলিউডে ছিলেন, দর্শকদের মনে তার বিশেষ জায়গা তৈরি হয়েছিল। পরে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে বহু তারকার ঘর সাজিয়েছেন। বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা ধর্মেন্দ্র ৮৯ বছর বয়সে গত ২৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু বলিউডের সোনালি দিনের বর্ণিল এক অধ্যায়ের সমাপ্তি টেনেছে।   এমআই/এলআইএ