বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছরে নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরছেন। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ‘ঐতিহাসিক ও স্মরণীয়’ করে রাখতে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। তাকে গণঅভ্যর্থনা জানাতে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকা সংলগ্ন সড়কে জোরেশোরে চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। যা এরইমধ্যে শেষ পর্যায়ে।আগামী বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) স্ত্রী ও কন্যাসহ দুপুর ১২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বিমানবন্দর থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তিনি সরাসরি পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকার সংবর্ধনাস্থলে যাবেন। সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে গুলশানের বাসভবনে যাওয়ার কথা রয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে পূর্বাচলের ৩০০ফিট এলাকা সংলগ্ন সড়কে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুটের বিশাল মঞ্চ। প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে মঞ্চের কাজ। এরই মধ্যে এলইডি স্ক্রিনও লাগানো হয়ে গেছে। মঞ্চের দুপাশে তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে লাগানো হচ্ছে মাইক। রাজধানীর কুড়িল থেকে সংবর্ধনা মঞ্চের পরবর্তী অংশ পর্যন্ত রাস্তার দুধারে তারেক রহমানকে স্বদেশে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুনও লাগানো হয়েছে। এদিকে, দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে বিএনপির সর্বত্রই এখন বইছে আনন্দের জোয়ার। তার দেশে ফেরার দুদিন আগেই বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার সংবর্ধনাস্থলে জড়ো হচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেকে মঞ্চের আশপাশেই অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে। নেতাকর্মীরা বলছেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে বিশাল সমাগম ঘটবে। তাই প্রিয় নেতাকে একনজর দেখতে এবং তার কথা শুনতে আগেই চলে এসেছেন তারা। তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে মঞ্চের কাজ তদারকি করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্সের স্পেশাল (এসএসএফ) সদস্যরা। মঞ্চের অদূরে পুলিশের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি টহল দিতে দেখা যায় সেনাবাহিনীকেও। এদিন দুপুরে রাজধানীর ৩০০ ফিটে অভ্যর্থনা মঞ্চ পরিদর্শনে এসে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পরশু (বৃহস্পতিবার) তারেক রহমান আসবেন। আজকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন জেলা থেকে লোক আসা শুরু হয়েছে। সুতরাং ২৫ ডিসেম্বর এখানে মানুষের মহামিলন ও মহামেলায় পরিণত হবে। এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৫০ লাখ মানুষের সমাগম হবে। তাদের সংবর্ধনা নেয়ার পর তার মা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যিনি দীর্ঘদিন নিপীড়ন নির্যাতন সহ্য করেছেন, আজকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাকে দেখে তিনি বাসায় যাবেন।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ১০টি রুটে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করার কথা জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। বলা হয়, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় যাতায়াতের উদ্দেশে বিশেষ ট্রেন অথবা অতিরিক্ত কোচ বরাদ্দের আবেদন করেছে বিএনপি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১০টি রুটে স্পেশাল ট্রেন পরিচালনা করা হবে এবং নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে। অন্যদিকে, আগামীকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী ছাড়া সহযাত্রী, দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত তারেক রহমানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তারেক রহমানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন চেয়ারপারসনের স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা। এছাড়া দলের বিশ্বস্ত নেতাকর্মীদের সমন্বয়েও একটি বিশেষ নিরাপত্তা টিম গঠন করা হয়েছে। দেশে ফেরার পর গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে ওঠার কথা রয়েছে তারেক রহমান। তবে এখনো সেই বাড়ির সংস্কার কাজ চলছে বলে জানা গেছে। যদি কাজ পুরোপুরি শেষ না হয়, তাহলে পাশে থাকা মা খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’য় আপাতত উঠবেন বলে জানিয়েছেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন। দেশে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেয়া সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান। ১৮ মাস কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তি পান তিনি। চিকিৎসার জন্য ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা ছাড়েন তারেক রহমান।