বছরের শুরুতে উত্তাপ; মাঝে খানিকটা স্বস্তি-শেষদিকে আবারও ঊর্ধ্বমুখী। দাম-দরের এমন উত্থান-পতনে বছর পার করছে চাল-তেল-পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজার। উচ্চ মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট মানুষ কমিয়েছে খরচের পরিমাণ; কাটছাঁট করেছেন বাজারের ফর্দে।২০২৫। খাদ্যপণ্যের দাম প্রায় ১১ শতাংশ বাড়ার চাপ নিয়ে চলতি বছর শুরু করেন ভোক্তারা। এছাড়া ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা আর বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি দেশে রয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। সব মিলিয়ে বছর জুড়ে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার। উৎপাদন ও চাহিদা-জোগানে কোন সংকট না থাকলেও জানুয়ারিতেই বাড়ে চালের দাম। মার্চে হয় আরও ঊর্ধ্বমুখী। মে'র মাঝামাঝি কিছুটা কমলেও আবারও চড়ে বসে জুলাই মাসে। অক্টোবরে কিছুটা কমে উচ্চমূল্যেই স্থিতিশীল রয়েছে চালের বাজার। আরও পড়ুন: রমজানে নিত্যপণ্য আমদানির অর্থ পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা মার্চে মসুর ডালের দাম কেজিতে ২৫ টাকা পর্যন্ত কমতির স্বস্তি মিললেও; বছর শুরুর ১৩০ টাকা কেজি দরের পণ্যটি শেষ মাসে কিনতে রাজধানীবাসীকে গুনতে হয়েছে ১৭০ টাকা। অস্থিতিশীলতা না দেখালেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বছর শেষ করতে যাচ্ছে আটা। উত্থান-পতন দেখা গেছে ছোলার দামেও। বছরের শুরুতে প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ১২৫ টাকা। তবে জুলাইয়ে ৩০ টাকা কমে প্রতিকেজি ছোলা ৯৫ টাকায় কিনেছেন ভোক্তারা। তবে ১৫ টাকা বেড়ে গত মাসে ১১০ টাকায় ছোলা বিক্রি হয়েছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট ভোক্তাকে ভুগিয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। নির্ধারিত দামের চেয়ে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেশিতে প্রতিলিটার বিক্রির অভিযোগ মেলে। দাম বাড়ার যুক্তি-তর্কে মার্চে জোরালো হয় ব্যবসায়ী-মন্ত্রণালয় আলোচনা। এপ্রিলে আসে লিটারে ১৪ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা। ডিসেম্বরে লিটারে আরও ৬ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে বছরজুড়েই ভোক্তাকে স্বস্তির খবর দিয়েছে চিনি। রমজানে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পণ্যটি বছরের শেষ মাসে নেমেছে ১০০ টাকায়। মজাদার মসলার বাজার বছর জুড়ে থেকেছে অস্থিতিশীল। রোজার মাস মার্চে ৬ হাজার টাকা কেজিতে উঠে যায় এলাচ; জিরা বিক্রি হয় সাড়ে ৭শ থেকে ৮শ টাকায়। কোরবানি ঘিরে জুনে চাহিদা বাড়লেও পর্যাপ্ত সরবরাহে কমে আসে দাম। বছরের বাকি সময়ে থেকে স্থিতিশীল। স্বাভাবিক চাহিদা জোগানে বছর শুরু করলেও এপ্রিলে এসে সরবরাহ সংকটে পড়ে পেঁয়াজ। ১৫ টাকা বেড়ে কেজি উঠে যায় ৬৫ টাকায়। আগস্টে আরেক দফায় বেড়ে হয় ৭৫ থেকে ৯০ টাকা। গত সেপ্টেম্বরে দাম কমে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা হলেও নভেম্বরের শুরুতে হয় লাগামহীন। প্রতিকেজি বিক্রি হয় ১৩০ টাকায়। পরে আমদানির খবরে ১১০ টাকায় নামলে ডিসেম্বরে ফের পৌঁছায় ১৫০ টাকায়। বছরের মাঝামাঝি হঠাৎ দাম বাড়ার জোয়ারে গা ভাসায় কাঁচামরিচ। জুলাইয়ে বিক্রি হয় সাড়ে ৩শ টাকা কেজি দরে। আগস্টে ঠেকে ৪০০ তে। তবে সেপ্টেম্বর থেকে কমতে কমতে ডিসেম্বরে নামে ৩০ টাকায়। আরও পড়ুন: পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা, হঠাৎ কেন দাম বাড়ছে? রমজানকে কেন্দ্র করে চাহিদা বাড়ায় মার্চে প্রতিকেজি ব্রয়লারের দাম হয় ২১০ থেকে ২২০ টাকা। জুনে নেমে আসে দেড়শো টাকায়। জুলাইয়ে বেড়ে ১৮০ টাকা হলেও চলতি ডিসেম্বরে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্যের বাজারে। কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশে ব্যবহৃত অধিকাংশ পণ্যই আমদানির ওপর নির্ভরশীল। যখন আমদানি ঘাটতি দেখা দেয়, তখন দাম কিছুটা বাড়ে। তবে দেশেই উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলে পণ্যের দামও স্বাভাবিক থাকে। সাম্প্রতিক সময়ের দাম বাড়ার মূল কারণ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, যার সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তবে ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে নিয়মিত বাজার নজরদারি তাগিদ সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, যখন বাজারে অস্থিরতা বাড়ে তখনই কেবল মনিটরিং বাড়োনো হয়। কিন্তু নিয়মিত তদারকি চালু থাকলে অসাধুরা কারসাজির সুযোগ পাবে না।