বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে কী বলল ভারত

ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনারকে তলবের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে পাল্টা তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দিল্লি বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে কী বার্তা দিয়েছে–ভারতীয় কিছু গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেই তথ্য।সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে ‘অনাকাঙিক্ষত ঘটনা’ এবং শিলিগুড়িতে ‘একটি ভিসা সেন্টার ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানাতে’ মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। এরপরই বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ-মিয়ানমার বিভাগের প্রধান যুগ্ম সচিব বি শ্যাম বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ‘তলব’ করেন। সংশ্লিষ্টদের দাবি, বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে, ইনকিলাব মঞ্চের সাবেক আহ্বায়ক ও মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডের ‘সঠিক তদন্তের প্রয়োজনীয়তা’ সম্পর্কে অবহিত করেছেন বি শ্যাম। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।  আরও পড়ুন: দিল্লির পর কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন ঘেরাওয়ের চেষ্টা! ওপরে উল্লিখিত তথ্য দেয়া একজন ব্যক্তি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, হাদির মৃত্যুর জন্য ভারতকে দোষারোপ করার পরিবর্তে, অপরাধীদের শনাক্ত করার জন্য একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা উচিত। অনেকের মতে, হাদি হত্যাকাণ্ডে ভারতের হাত থাকার ‘অপ্রমাণিত অভিযোগ’ বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ভারতবিরোধী বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছে। হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, এসব ঘটনার জেরে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, যা ইতোমধ্যেই সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটিয়েছে। এ নিয়ে গত ১০ দিনের মধ্যে, প্রতিবাদ জানাতে প্রণয় ভার্মাকে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করার দ্বিতীয় ঘটনা, অন্যদিকে মঙ্গলবারের আগে রিয়াজ হামিদুল্লাহকেও গত সপ্তাহে প্রতিবাদ জানাতে ভারতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশকে ঘিরে টানা কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে ভারতের একাধিক শহরে। কলকাতা, শিলিগুড়ি থেকে শুরু করে রাজধানী দিল্লি– প্রতিটি জায়গাতেই বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও ভিসা সংক্রান্ত অফিস ঘিরে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ এবং কড়া নিরাপত্তার ছবি সামনে আসছে। প্রতিবেশী বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগই এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। মঙ্গলবার কলকাতায় শতাধিক বিক্ষোভকারী শিয়ালদহ থেকে পদযাত্রা শুরু করেন বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের দিকে। ‘হিন্দু হুঙ্কার পদযাত্রা’ নামে এই মিছিলের আয়োজন করে বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ মঞ্চ। বিক্ষোভকারীরা ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই’, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা চাই’-সহ একাধিক স্লোগান তোলেন। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সম্প্রতি বাংলাদেশের ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস নামে একজন পোশাকশ্রমিককে হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদে সরব হন তারা। তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা এড়াতে আগাম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে পুলিশ সূত্রে।  আরও পড়ুন: নয়াদিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টায় বিক্ষোভকারীরা কলকাতার পাশাপাশি শিলিগুড়িতেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ দেখান অনেকে। দাবি ওঠে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভিসা পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হোক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানেও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এর আগে একই ধরনের ছবি ধরা পড়ে রাজধানী দিল্লিতেও। বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে বিক্ষোভের জেরে কূটনৈতিক এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়। দিল্লি পুলিশ জানায়, কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা কোনোভাবেই ঝুঁকিতে পড়তে দেয়া হবে না। এই ধারাবাহিক প্রতিবাদ এমন এক সময়ে শুরু হয়েছে, যখন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিজেই এক সংবেদনশীল পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সরকারিভাবে ভারত এখনও বলছে, বাংলাদেশ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।