এক দশকের মধ্যে চাঁদে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করবে রাশিয়া

চাঁদে একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা করছে রাশিয়া। আগামী এক দশকের মধ্যে এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। উদ্দেশ্য, পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ ঘিরে চলমান মহাকাশ কর্মসূচি এবং রাশিয়া-চীন যৌথ গবেষণা কেন্দ্রে শক্তি সরবরাহ করা। খবর রয়টার্সের।১৯৬১ সালে রুশ মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন প্রথম মানুষ হিসেবে মহাকাশে যাওয়ার পর থেকে রাশিয়া মহাকাশ গবেষণায় নিজেকে একটি শীর্ষস্থানীয় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের তুলনায় পিছিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় নিজেদের হারানো গৌরব ফেরানোর জোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে মস্কো। সম্প্রতি রাশিয়া ও চীন চাঁদে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার জন্য একটি সমঝোতা সনদে স্বাক্ষর করে। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ পৃষ্ঠে একটি মানববসতি এবং চন্দ্রঘাঁটি স্থাপন করা হবে, যা চালাতে প্রয়োজন হবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের। প্রকল্পটি ২০৩৬ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে জানানো হয়। বিশেষত এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে, যার জন্য মানুষের উপস্থিতি প্রয়োজন হবে না। তবে নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন করার জন্য মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা কিছুদিন আগে একটি পরিকল্পনা উত্থাপন করে। তবে এটি ২০২৬ সালের বাজেট প্রস্তাবে বাতিল করা হয়। এই বাতিলের পরই রাশিয়া ও চীন যৌথভাবে তাদের উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের ঘোষণা দেয়। আরও পড়ুন: প্রথম বাংলাদেশী নারী মহাকাশচারী প্রার্থী সারাহ করিম রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মহাকাশ সংস্থা রসকসমস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ২০৩৬ সালের মধ্যে চাঁদে একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এবং এটি বাস্তবায়নের জন্য মহাকাশ সংস্থা লাভোচকিন অ্যাসোসিয়েশনের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। রসকসমস আরও জানিয়েছে, এই কেন্দ্রের উদ্দেশ্য হলো রাশিয়ার চন্দ্র কর্মসূচিকে শক্তি যোগান দেয়া, যার মধ্যে রয়েছে রোভার, একটি পর্যবেক্ষণাগার ও রাশিয়া-চীন যৌথ আন্তর্জাতিক চন্দ্র গবেষণা কেন্দ্রের অবকাঠামো। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই প্রকল্পটি স্থায়ীভাবে কার্যকর বৈজ্ঞানিক চন্দ্র স্টেশন তৈরি এবং এককালীন মিশন থেকে দীর্ঘমেয়াদী চন্দ্র অনুসন্ধান কর্মসূচিতে রূপান্তরের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’ রসকসমস স্পষ্টভাবে বলেনি যে, প্ল্যান্টটি পারমাণবিক হবে। তবে তারা জানিয়েছে, এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রুশ রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক কর্পোরেশন রোসাটম এবং রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় পারমাণবিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুরচাটভ ইনস্টিটিউট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আরও পড়ুন: মহাকাশে কেন ইঁদুর পাঠিয়েছে চীন? এদিকে যুক্তরাষ্ট্রও চাঁদে তার নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নাসা-এর আর্টেমিস প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর নভচারীরা চাঁদে পা রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে নাসা-এর নিজস্ব চন্দ্রঘাটি প্রকল্পটি কিছু অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে স্টেশনটি উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা থাকলেও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত বাজেটে এই প্রকল্পটি বাতিলের আহ্বান জানানো হয়েছে, যদিও স্টেশনটির বিভিন্ন মডিউল তৈরির কাজ ইতোমধ্যে অগ্রগতি লাভ করেছে।  চাঁদকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও চীনের এই নতুন পরিকল্পনা বিশ্বের মহাকাশ গবেষণার পরিসরে এক নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, যা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ নীতির দৃষ্টিকোণেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।