গোপালগঞ্জ কারাগারের বর্জ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে দুই শতাধিক পরিবার

গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের অব্যবস্থাপনায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন কারাগার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। কারাগারের অপরিশোধিত পয়ঃবর্জ্য সরাসরি লোকালয়, জলাশয় ও ফসলি জমিতে মিশে সৃষ্টি করছে এক ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়। তীব্র দুর্গন্ধ আর মশা-মাছির উপদ্রবে অতিষ্ঠ অন্তত দুই শতাধিক পরিবারের জনজীবন।২০০৯ সালে কারাগারটি চালুর কয়েক বছর পর থেকেই শুরু হওয়া এই ‘নরকযন্ত্রণা’ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চললেও স্থায়ী সমাধানে নেই কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। সরেজমিনে দেখা যায়, কারাগারের পশ্চিম ও উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে চলা ড্রেনটি এখন কোনো সাধারণ নর্দমা নয়, বরং বিষাক্ত বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। কারাগারের ভেতর থেকে আসা উন্মুক্ত পয়ঃবর্জ্য বাতাসের সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে অসহনীয় দুর্গন্ধ। এই দূষিত পানি শুধু জনবসতিতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, তা সরাসরি গিয়ে পড়ছে পাশের ফসলি জমিতে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন, আর সেই দূষিত পানি প্রবাহিত হয়ে মিশছে শহরের প্রধান লেকেও। ভুক্তভোগী কৃষক ফারুখ মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আগে এই জমিতে সোনার ফসল ফলত। এখন জেলখানার ময়লা পানিতে পা রাখাই দায়। পচা পানির গন্ধে মাঠে কাজ করা যায় না, আবার ফসলেও নানা রোগ ধরছে। আমাদের দেখার কেউ নেই।’ দীর্ঘদিন ধরে বিষাক্ত এই পরিবেশের মধ্যে বসবাস করায় ওই এলাকার বাসিন্দারা ডায়রিয়া, টাইফয়েড ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। স্থানীয় বাসিন্দা আছিয়া বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাড়ির জানালা খোলার উপায় নেই। গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সারাবছর চুলকানি আর পেটের অসুখে ভুগছে। আমরা কি মানুষ নই? জেলের মানুষ ভালো রাখতে গিয়ে আমাদের কেন এই নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে?’ আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জ আদালত ও ডিসি অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ একই অভিযোগ করেন তানজিলা বেগম। তিনি বলেন, ‘মশা-মাছির অত্যাচারে ঘরে টিকে থাকাই কঠিন। আমরা বারবার পৌরসভা ও জেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা শুধু আশ্বাস দেয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। আমরা এই অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই।’ হামিম হোসাইন বলেন, ‘খাবার খেতে বসলে দুর্গন্ধে বমি আসে। আত্মীয়-স্বজনরা আমাদের বাড়িতে আসতে চায় না। জেলের বর্জ্য আমাদের জীবনটাকে বিষিয়ে তুলেছে।’ বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি, অর্থাৎ ৭ শতাধিক হাজতি ও কয়েদি রয়েছেন। ফলে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছে পুরানো অবকাঠামো। গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের সুপার শওকত হোসেন মিয়া বলেন, ‘একটি আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম ও স্থায়ী বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।’ একটি সংশোধনাগারের অব্যবস্থাপনার দায় বছরের পর বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছে সাধারণ মানুষ। এলাকাবাসীর দাবি, আর কোনো ফাঁকা আশ্বাস নয়; দ্রুত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বর্জ্য অপসারণ ও স্থায়ী ড্রেন নির্মাণের মাধ্যমে এই অসহনীয় পরিবেশ থেকে তাদের মুক্তি দেয়া হোক। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রশাসন দ্রুত হস্তক্ষেপ করবে এমনটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর।