চলতি বছরের নভেম্বর মাসে নাইজেরিয়ার ক্যাথলিক স্কুল থেকে অপহৃত আরও ১৩০ জন শিশুকে মুক্ত করা হয়েছে। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে একই ঘটনায় অপহৃত প্রায় ১০০ জনকে মুক্ত করা হয়েছিল। সর্বশেষ মুক্তির মধ্য দিয়ে ওই ঘটনায় অপহৃত সব শিক্ষার্থী এখন নিরাপদে ফিরেছে বলে দাবি করেছে দেশটির সরকার। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র সানডে ডারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এর এক পোস্টে বলেন, নাইজার রাজ্যে অপহৃত আরও ১৩০ শিক্ষার্থী মুক্তি পেয়েছে। এখন আর কেউ বন্দিদশায় নেই। পোস্টটির সঙ্গে মুক্তিপ্রাপ্ত শিশুদের হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়। নভেম্বরের শেষ দিকে দেশটির উত্তর-মধ্যাঞ্চলীয় নাইজার রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রাম পাপিরিতে অবস্থিত সেন্ট মেরিজ কো-এডুকেশনাল বোর্ডিং স্কুল থেকে সশস্ত্র বন্দুকধারীরা শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষাকর্মীকে অপহরণ করে। এই ঘটনাটি নাইজেরিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে শুরু হওয়া গণঅপহরণের একটি বড় উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জাতিসংঘের একটি সূত্র জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) নাইজার রাজ্যের রাজধানী মিন্না শহরে নেওয়া হয়েছে। তবে অপহরণের শুরু থেকেই কতজন শিক্ষার্থী ও কর্মীকে অপহরণ করা হয়েছিল, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া (সিএএন) জানিয়েছে, মোট ৩১৫ জন শিক্ষার্থী ও কর্মীকে অপহরণ করা হয়েছিল। ঘটনার পরপরই প্রায় ৫০ জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এরপর ৭ ডিসেম্বর সরকার প্রায় ১০০ জনকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়। কারা এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল বা কীভাবে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করা হয়েছে—এ বিষয়ে সরকার কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। নাইজেরিয়ায় মুক্তিপণের বিনিময়ে অপহরণ একটি সাধারণ অপরাধে পরিণত হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক গণঅপহরণ দেশটির নাজুক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নতুন করে সামনে এনেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি অনেকের মনে ২০১৪ সালে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় চিবোক শহর থেকে জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম কর্তৃক স্কুলছাত্রী অপহরণের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। গত নভেম্বর মাসেই নাইজেরিয়ায় পৃথক ঘটনায় বেশ কয়েকজন মুসলিম স্কুলছাত্রী, ৩৮ জন গির্জার উপাসক, এক কনে ও তার কনের সঙ্গীদের অপহরণ করা হয়। একই সঙ্গে পুরুষ কৃষিশ্রমিক, নারী ও শিশুরাও বিভিন্ন স্থানে জিম্মি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নাইজেরিয়া বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, দেশটিতে খ্রিস্টানদের ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে, যা তিনি “গণহত্যা” বলে অভিহিত করেছেন। তবে নাইজেরিয়ার সরকার এবং স্বাধীন বিশ্লেষকরা এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু খ্রিস্টান ডানপন্থী গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের প্রচারণার অংশ। প্রায় ২৩ কোটি জনসংখ্যার ধর্মীয়ভাবে বৈচিত্র্যময় নাইজেরিয়া একাধিক নিরাপত্তা সংকটে ভুগছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জিহাদি গোষ্ঠীর তৎপরতা, উত্তর-পশ্চিমে সশস্ত্র ‘ব্যান্ডিট’ চক্রের দৌরাত্ম্য এবং বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘাতের ফলে মুসলিম ও খ্রিস্টান—উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই প্রাণ হারাচ্ছেন। সর্বশেষ মুক্তির ঘটনায় নাইজেরিয়াজুড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়লেও, দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ এখনো কাটেনি। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান কেএম