চীনের দীর্ঘমেয়াদি ‘জাতীয় পুনরুজ্জীবন’ কৌশলের অংশ হিসেবে অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের ‘মূল স্বার্থ’-এর অন্তর্ভুক্ত করেছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) মার্কিন কংগ্রেসে জমা দেওয়া ওই প্রতিবেদনে অরুণাচলকে তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বিরোধপূর্ণ এলাকার সঙ্গে এক কাতারে রাখা হয়েছে। পেন্টাগনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা নেতৃত্ব তাদের ‘মূল স্বার্থ’-এর পরিধি সম্প্রসারিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগরে সার্বভৌমত্ব দাবি, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ এবং অরুণাচল প্রদেশ। এসব লক্ষ্যকে ২০৪৯ সালের মধ্যে ‘চীনা জাতির মহান পুনরুজ্জীবন’ অর্জনের কেন্দ্রীয় উপাদান হিসেবে দেখা হচ্ছে। আরও পড়ুন>>অরুণাচলের আরও ২৭ জায়গার নতুন নাম দিলো চীন, তীব্র প্রতিক্রিয়া ভারতেঅরুণাচলের কাছে ৩৬টি বিমান বাংকার বানিয়েছে চীন, চরম উদ্বেগে ভারতঅরুণাচলকে আবারও নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করলো চীনঅরুণাচলকে ভারতের অংশ বলায় চীনে ভারতীয় ইউটিউবার আটক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনা কর্মকর্তারা দেশটির একীকরণ এবং বিতর্কিত ভূখণ্ডগুলো, বিশেষ করে তাইওয়ান দখলকে জাতীয় পুনরুজ্জীবনের ‘স্বাভাবিক প্রয়োজন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই লক্ষ্য পূরণে একটি পুনরুজ্জীবিত চীন বিশ্বমঞ্চে আরও প্রভাবশালী ভূমিকা নেবে এবং ‘যুদ্ধ করতে ও জিততে সক্ষম’ একটি বিশ্বমানের সামরিক শক্তি গড়ে তুলবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন স্বার্থ কঠোরভাবে রক্ষার কথাও বলা হয়েছে। ভারত-চীন সম্পর্ক প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর অবশিষ্ট সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারে দুই দেশ একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার দু’দিন পর ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, সরাসরি ফ্লাইট, ভিসা সহজীকরণ এবং শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক বিনিময়সহ বিভিন্ন বিষয়ে মাসিক উচ্চপর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়। পেন্টাগনের মূল্যায়নে বলা হয়েছে, এলএসি বরাবর উত্তেজনা কমিয়ে ভারত-চীন সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ঘনিষ্ঠতা আরও গভীর হওয়া ঠেকাতে চাইছে বেইজিং। তবে পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে ভারত সতর্ক অবস্থানেই থাকবে এবং এই অবিশ্বাস সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়েছে। পেন্টাগনের মূল্যায়ন অনুযায়ী, চীন তিনটি বিষয়কে আপসহীন ‘মূল স্বার্থ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে—চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভূখণ্ড ও সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত দাবির প্রতিরক্ষা ও সম্প্রসারণ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এ বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল যে, তারা যদি চীনের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে—এমন কোনো ধারণা তৈরি হয়, তবে তা তাদের বৈধতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরকেএএ/