হিংসার ক্ষতি থেকে বাঁচার ১০ উপায়

কারো কোনো অর্জন বা গুণ দেখে অসহ্যবোধ করা, তার ওই গুণ, অর্জন বা সাফল্যের ধ্বংস চাওয়া এবং নিজে তা অর্জন করার আকাঙ্খাকে হিংসা বলা হয়। মানুষের মধ্যে থাকা খারাপ প্রবৃত্তিগুলোর অন্যতম এই হিংসা যা দুনিয়ার বহু ফেতনা, ফাসাদ, ঝগড়া-বিবাদের অন্যতম কারণ। ইসলামে হিংসা নিষিদ্ধ এবং অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। হিংসার কারণে মানুষের নেক আমল ধ্বংস হয়ে যায়। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থেকো। হিংসা নেক আমলসমূহ ধ্বংস করে দেয়, যেমন আগুনে লাকড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০৫) ইমান, নেক আমল ও গুনাহ থেকে মুক্ত থাকার কারণে মুমিনের অন্তরে নুর সৃষ্টি হয়। যে নুরের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক তৈরি হয়, নেক কাজে আগ্রহ সৃষ্টি হয়, গুনাহের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ মানুষের অন্তরের এই নুর নিভিয়ে দেয়। তাকে ক্রমশ আল্লাহর পথ ও সত্যের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং শয়তানের পথে নিয়ে যায়। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, হিংসা নেক আমলসমূহের নুর বা আলোক নিভিয়ে দেয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০৬) হিংসা কোনো মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। ইমান ও হিংসা সাংঘর্ষিক বৈশিষ্ট্য। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কোনো বান্দার অন্তরে ইমান ও হিংসা একত্রিত হতে পারে না। (সুনানে নাসাঈ: ৩১০৯) হিংসা যেমন হিংসুকের জন্য ক্ষতিকর, অন্যদের জন্যও বিপদজনক। হিংসার কারণে হিংসুক জুলুম করে, অন্যের ক্ষতি করে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা হিংসুকের হিংসার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলেছেন। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনাসহ হিংসার ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার ১০টি উপায় উল্লেখ করেছেন: ১. আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা হিংসার ক্ষতি থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করুন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, বলুন আমি আশ্রয় নিচ্ছি ভোরের প্রভুর কাছে তার সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে অন্ধকার রাতের অনিষ্ট থেকে যখন তা প্রবল হয় গিঁটে ফুঁ দেওয়া জাদুকরীদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে। (সুরা ফালাক: ১-৫) ২. তাকওয়া অবলম্বন করা তাকওয়া অবলম্বন করুন। যে তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন এবং অন্যের হাতে ছেড়ে দেন না। ৩. ধৈর্য ধারণ করা  হিংসার মোকাবেলায় ধৈর্য ধারণ করুন। যে হিংসা করে, তাকে আঘাত করবেন না, মনে মনে তার ক্ষতি করার চিন্তা করবেন না। ৪. আল্লাহর ওপর ভরসা করা হিংসার বিপরীতে আল্লাহর উপর ভরসা করুন। যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হন। আল্লাহর ওপর ভরসা যে কোনোঅন্যায় ও শত্রুতার মোকাবেলায় শক্তিশালী হাতিয়ার। ৫. হিংসুকের চিন্তা থেকে মনকে মুক্ত রাখা হিংসুককে গুরুত্ব দেবেন না। হিংসুককে ভয় করবেন না বা তার চিন্তায় ডুবে থাকবেন না। ৬. আল্লাহর কাছে তওবা করা যাবতীয় গুনাহ থেকে তওবা করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের যে বিপদ আসে তা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে। (সুরা শুরা: ৩০) গুনাহ থেকে তওবা করলে আল্লাহ তাআলা সাহায্য করবেন। ৭. সদকা করা সদকা করুন। সদকা করলে আল্লাহ তাআলার রহমত ও সাহায্য আসে এবং যে কোনো বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হয়। ৮. হিংসুকের প্রতি সদাচার করা এটি সবচেয়ে কঠিন কাজ, কিন্তু আল্লাহ যাকে তাওফিক দেন সে পারে। শত্রু যত বেশি হিংসা করবে, তার প্রতি তত বেশি সদাচার ও দয়া প্রদর্শন করুন। আল্লাহ বলেন, ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত কর তা দ্বারা যা উৎকৃষ্টতর, ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা রয়েছে সে হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। (সুরা ফুসসিলাত: ৩৪) ৯. আল্লাহর তাওহিদের ওপর বিশ্বাস দৃঢ় করা এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর ওপর বিশ্বাস দৃঢ় করুন। আল্লাহ ছাড়া কেউ ক্ষতি বা উপকার করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ যদি তোমাকে কোন কষ্টে নিপতিত করেন তাহলে তিনি ছাড়া কেউ তা মোচন কারার নেই, আর যদি তিনি তোমার প্রতি কোন কল্যাণ ও শান্তি পৌঁছাতে চান তাহলে তাঁর অনুগ্রহ অপসারণ করার কেউ নেই; তিনি নিজের অনুগ্রহ নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান দান করেন; এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু। (সুরা ইউনুস: ১০৭) ১০ নেয়ামত গোপন রাখা যেসব নেয়ামত দেখলে মানুষ হিংসা করতে পারে বা মানুষে তা সম্ভব হলে গোপন রাখুন। যেমন আল্লাহ তাআলার নবী ইয়াকুব (আ.) তার ছেলেদের মানুষের নজর থেকে বাঁচতে আলাদা আলাদাভাবে মিশরে প্রবেশ করতে বলেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, সে (ইয়াকুব) বলল, হে আমার ছেলেরা, তোমরা এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না, বরং ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ কর এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তের বিপরীতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না। হুকুম একমাত্র আল্লাহরই। তাঁরই ওপর আমি তাওয়াক্কুল করছি এবং তাঁরই ওপর যেন সকল তাওয়াককুলকারী তাওয়াককুল করে। (সুরা ইউসুফ: ৬৭) ওএফএফ